ছাত্রদের যেখানেই পাবেন গুলি করবেন, ফোনালাপে শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২৫ ০১:০৭ এএম

ফাইল ফটো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে গত বছর সরকারিভাবে মারণাস্ত্র ব্যবহারের ‘খোলা নির্দেশ’ দিয়েছিলেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমন বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে আল জাজিরার হাতে থাকা একাধিক গোপন ফোনালাপে।

জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি) এসব রেকর্ডিং করেছে, যেখানে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি খোলা নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। এখন ওরা মারণাস্ত্র ব্যবহার করবে, যেখানেই পাবে গুলি করবে।’

আল জাজিরার অনুসন্ধানী ইউনিট (I-Unit) জানিয়েছে, রেকর্ডগুলো ডাক্তরড নয়, ফরেনসিক পরীক্ষায় তা প্রমাণিত। ভয়েস-ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে কলকারীদের পরিচয়ও নিশ্চিত করা হয়েছে।

একটি ফোনালাপে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানে জমায়েত দেখবে, ওদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি করবে।’ এরপরই শুরু হয় হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ-যা সে সময় সরকার অস্বীকার করেছিল।

তবে ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শাবির শরীফ জানান, ‘আমাদের হাসপাতালের গেটে গুলি চালানো হয়। আহত অনেক ছাত্রের এক্স-রে রিপোর্টে দেখা গেছে, শরীরের ভেতরে বিশাল আকারের গুলি রয়ে গেছে।’

২০২৪ সালের জুনে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে সারাদেশে ছাত্ররা রাস্তায় নামেন। আন্দোলন রক্তাক্ত রূপ নেয় ১৬ জুলাই, রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। এরপরই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, এই আন্দোলনে নিহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন, আহত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি। শেখ হাসিনা, কয়েকজন মন্ত্রী ও নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। বিচার শুরু হবে আগস্ট মাসে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম বলেন, পুলিশ তাকে পাঁচবার প্রতিবেদন বদলাতে বাধ্য করে যাতে গুলির কথা না থাকে। ‘তারা চাইছিল লেখা হোক ইট-পাটকেলের আঘাতে মৃত্যু। অথচ গুলিতেই মারা যান সাঈদ ভাই।’

আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত নিয়ে গোপন ফোনালাপে উঠে আসে হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সংশ্লিষ্টতা। তিনি ফোনে পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে প্রশ্ন করেন, ‘ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে কেন? কে লুকোচুরি খেলছে?’

আবু সাঈদের মৃত্যুর ১২ দিন পর নিহতদের ৪০ পরিবারের সদস্যকে গণভবনে ডেকে পাঠানো হয়। তার বাবা মকবুল হোসেন বলেন, ‘জোর করে নিয়ে গিয়েছিল। না গেলে বিপদ হতো।’

আবু সাঈদের বোন সুমি খাতুন গণভবনে শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘ভিডিওতেই দেখা গেছে পুলিশ গুলি করেছে। তদন্ত করে আর কী হবে? এখানে আসাটাই ভুল ছিল।’

আন্তর্জাতিক অপরধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক সময় ফোনে অন্যরা বলত, বলবেন না, রেকর্ড হচ্ছে। তখন হাসিনা নিজেই বলতেন, ‘হ্যাঁ, জানি, রেকর্ড হচ্ছে, সমস্যা নেই।’ তিনি মন্তব্য করেন, ‘হাসিনা যাদের জন্য গর্ত খুঁড়েছেন, এখন নিজেই সেখানে পড়েছেন।’

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী কখনোই ‘মারণাস্ত্র’ ব্যবহারের কথা বলেননি। অডিওগুলো চেরি-পিকড এবং ডাক্তরড অথবা উভয়ই।’ তারা আরও দাবি করে, আবু সাঈদের মৃত্যুর তদন্তে সরকারের ভূমিকা ছিল ‘সঠিক ও নির্ভুল।’

এআরএস

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর