‘তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই পিআর সিস্টেমের দাবী তোলা হচ্ছে’

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০২৫ ০০:০৭ এএম

নির্বাচন নিয়ে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা পিআর সিস্টেম চেয়েছি। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে পলিসি রিসার্চ এন্ড স্টাডিস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রবের সভাপতিত্বে ‌'ফ্যাসিবাদ রোধে নির্বাচনী সংস্কার : সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি কি সমাধান? শিরোনামে কী নোট উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওয়ারেসুল করিম। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা কিন্তু শুধু চাকরির জন্য তাগ স্বীকার করেনি। তারা চেয়েছিল ন্যায়বিচার সবক্ষেত্রে। তারা সাংবিধানিক স্বৈরাচারকে উৎখাত চেয়েছিল। তারা বলেছিল উই ওয়ান্ট জাস্টিস। তারা রাষ্ট্রের সবখানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে আন্দোলন করেছিল। তিনি তার কী নোটে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিভিন্ন দেশের চিত্র তুলে ধরেন।

আলোচক ড. মহিউদ্দীন সরকার বলেন, বর্তমান সময়ে পিআর-এর গুরুত্ব বেড়েছে। নেতৃত্ব বাছাই পদ্ধতি, পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে উত্তম। কেন্দ্র দখল রোধ হবে, রাতের ভোট বন্ধ হবে না। এ কারণে পিআর পদ্ধতির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। পিআর পদ্ধতিতে সারা বিশ্বে এক সাথে ভোট করা যাবে। তা না হলে বহুদলীয় গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামীমা তাসমিম বলেন, আমি ১৭ বছর ভোট দেইনি। ভোটের মূল্যায়নের জন্য পিআর চাই। এই সময় পিআর পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সিটিজেন ইনিশিয়েটিভের কো-ফাউন্ডার মোহাম্মদ তালহা বলেন, এখন বড় দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র চাই, এই জন্য এমন পদ্ধতি চাই যার মাধ্যমে মানুষ সঠিকভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার পাবে।

বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, নির্বাচন আসন্ন এবং এখন চাই সঠিক পদ্ধতি নিবার্চন। এ সময় বিশ্ব পিআর সিস্টেমের পক্ষে। নির্বাচন নিয়ে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগুতে হবে। পিআর সিস্টেম আমরা চেয়েছি।

নির্বাচনের প্রতিটি দল প্রার্থী ঘোষণা করবে। তুরস্কে পিআর পদ্ধতি আছে। ইউরোপে আছে। পিআর পদ্ধতি আমাদের জন্য ভালো হবে। জাতীয় নেতৃবৃন্দ ঠিক করবেন। তরুণরা ত্যাগ শিকার করে রক্ত দিয়ে স্বৈরাচার মুক্ত করেছে। আমরা আগামী দিনে এক হবো গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারপারশন, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদকে রোধ করা, ফ্যাসিবাদমুক্ত করা দরকার। এখন রাজনৈতিক বিরোধ বেড়ে গেছে। আমরা আশা করেছিলাম তারা এক হয়ে কাজ করবে। আমরা ভালো নির্বাচনের দিকে যেতে চাই। ফ্যাসিবাদমুক্ত করার বহু পথ আছে। আমাদের মিনিম্যাম একটা দিকে যেতে হবে। পিআর পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হলে বহুপথ যেতে হবে। নয়াদিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক, মাসুমুর রহমান খলিলী বলেন, তুরস্কে পিআর সিসটেম আছে। এর মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশ হতে হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লা আমীন বলেন, ১৫-১৬ বছরের ফ্যাসিবাদের মাধ্যমে আমরা অত্যাচারিত। এখন ফ্যাসিবাদ মুক্ত করার সময়। আমি মনে করি, ৩০০ আসন হবে প্রচলিত নির্বাচনে। আর ৩০০ আসন হবে পিআরে। আমরা মিশ্র পদ্ধতির নির্বাচন চাই। নিউজিল্যাডে যেটা আছে। আমরা আপনাদের সাথে একমত। ফ্যাসিবাদ যাতে আর না আসে সেই ব্যবস্থা চাই।

ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ইফতেখার তারিক বলেন, পিআর পদ্ধতি বিএনপির জন্য টিকে থাকার একটা পদ্ধতি হতে পারে। পিআর পদ্ধতি আমাদের প্রয়োজন। এ সময়ের মধ্যে পিআর পদ্ধতি সম্ভব। পিআর পদ্ধতি হবে সবার জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে।

লেখক ও সাংবাদিক শাহ আবদুল হালিম বলেন, সারা দেশে আওয়ামীগ রন্দ্রে রন্দ্রে বসে আছে। এদের থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। ফ্যাসিবাদ মানে অর্থের পুঁজা। কালো টাকার ব্যবহার। এ সব থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।

এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট মুজাহিদ ইসলাম সাহিন বলেন, আমরা উচ্চ কক্ষে পিআর চাই। শত্তিশালাী বিচারব্যবস্থা চাই। মুক্ত মিডিয়া চাই, ১৭ বছরে মিডিয়া কী করেছে আপনারা জানেন। অনেক দলের মধ্যে গণতন্ত্র নেই। দলের মধ্যে ভোট কেনাবেচা হয়। টাকা দিয়ে কোটিপতিরা চলে আসে রাজনীতিতে। দলের মধ্যে আত্মীয়করণ করা হয়। এসব থেকে বের হতে হলে পিআর পদ্ধতি দরকার।

বিআইআইটির মহাপরিচালক, ড. মোহা. আবদুল আজিজ বলেন, ৩০০ আসন ঠিক রেখে ১০০ বাড়িয়ে পিআর সিসটেম করা যেতে পারে।

মানবাধিকার কর্মী মাহবুব হক বলেন, সেই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি আজ কোথায় যখন স্বৈরাচার দেশজুড়ে অত্যাচার চালিয়েছিল। আমরা ৫০ সাধারণ পদ্ধতিতে এবং ৫০ পিআর পদ্ধতিতে চাই। আর জনগণ কি বলছে তাদের কথাগুলো আসুক।

ইনপ্যাক ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এনায়েত হোসাইন জাকারিয়া বলেন, আমাদের হাতে যে সুযোগ এসেছে, আমরা হাতছাড়া করতে চাই না। আমরা অপেক্ষা ত্রুটিমুক্ত নির্বাচন চাই।
সিটি বিশ্বাবদ্যালয়ের ডিন প্রফেসর ড. জুলফিকার হাসান বলেন, বিশ্বে ৯৯ দেশে পিআর আছে। ৩০০ আসনে প্রচলিত নিয়মে এবং বাকি আসনে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হওয়া দরকার।

পরিশেষে সভাপতির ভাষণে অ্ধ্যাপক ড. আবদুর রব সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন। এবং বলেন, ফ্যাসিবাদের মূল উৎপাটনের জন্য পিআর প্রয়োজন; সেটা যেভাবেই হোক। যখন সুযোগ এসেছে, তখন সঠিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সবাইকে এক চিন্তায় আসতে হবে। যেন সবার মতামত প্রতিফলন করা যায়।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর