আশুরা উপলক্ষে ডিএমপির বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা

আগামী ৬ জুলাই (১০ মহররম) পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। পুরান ঢাকার হোসেনি দালান ইমামবাড়া, বড় কাটরা, মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্প, শিয়া মসজিদ, বিবিকা রওজা, মিরপুর পল্লবী বিহারী ক্যাম্পসহ অন্যান্য স্থান যেখানে ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে পবিত্র আশুরা পালিত হয়; সেখানে ইতোমধ্যেই পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিএমপি’র ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. সরওয়ার বলেন, আশুরা উপলক্ষ্যে তাজিয়া মিছিলসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোন ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই।
জানা গেছে, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা তৎপর থাকবেন। তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা কোন প্রকার ধাতব পদার্থ, দাহ্য পদার্থ, ছুরি, চাকু, তরবারি, লাঠি, বল্লম, ব্যাগ, পোটলা, সুটকেস, ছাতা বহন করতে পারবে না। ইমামবাড়ার আশেপাশের সংশ্লিষ্ট এলাকায় চেকপোস্টে তৎপরতা ইতিমধ্যে জোরদার করা হয়েছে। ইমামবাড়াগুলোর আশেপাশে ও পার্শ্ববর্তী উঁচু ভবনগুলোর ছাদে সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মধারী ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।
ইমামবাড়াগুলোতে অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসি’র ডগ স্কোয়াড দ্বারা সুইপিং করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ইমামবাড়া সিসি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ এবং এর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সকল অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশ মুখে আর্চওয়ে গেইট স্থাপন, হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টর দ্বারা তল্লাশির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং আগত সকলকেই তল্লাশির মধ্যদিয়ে যেতে হবে। নারীদের তল্লাশির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক নারী পুলিশ সদস্য মোতায়েনের ব্যবস্থা থাকবে। বিশেষায়িত সোয়াত থাকবে স্ট্যান্ডবাই। গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানসমূহের স্থির ও ভিডিওচিত্র ধারণের ব্যবস্থা থাকবে। আশুরাকে কেন্দ্র করে ৬ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ইমামবাড়াসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল রাখবে।
তাজিয়া কিংবা শোক মিছিলগুলোতে ডিএমপি যথাযথভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যে সকল রাস্তায় তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হবে সে সকল রাস্তায় পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন থাকবে। রাস্তার পার্শ্ববর্তী উঁচু ভবনগুলোতে পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। তাজিয়া মিছিলের সামনে, পিছনে ও মধ্যবর্তী অংশে পুলিশের দক্ষ টিম মোতায়েন থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সমূহ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হবে। তাজিয়া মিছিল চলাকালে যানজট নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকবে। বড় মিছিল শুরুর পূর্বে সংশ্লিষ্ট এলাকা ডগ স্কোয়াডসহ প্রয়োজনীয় মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে সুইপিং করা হবে।
ধানমন্ডি লেক এ কারবালায় ডুবুরিদল, অগ্নি নির্বাপক যান, সরঞ্জামাদি ও মেডিক্যাল টিম মোতায়েন থাকবে। বোমা, বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দল এবং ক্রাইমসিন টিম স্ট্যান্ডবাই থাকবে। নিষিদ্ধ সংগঠন ও অন্যান্য সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারিও চলমান থাকবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচার বন্ধে সাইবার মনিটরিং বৃদ্ধি করা হবে। এ বিষয়ে সকল আইন প্রয়োগকারী ও সেবা সংস্থার সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয় থাকবে। ইমামবাড়া কর্তৃপক্ষসহ মিছিল আয়োজনকারীদেরকে নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে পরামর্শ দিয়েছে ডিএমপি।
তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা কোন প্রকার ধাতব পদার্থ, দাহ্য পদার্থ, ছুরি, চাকু, তরবারি, লাঠি, বল্লম, ব্যাগ, পোটলা, সুটকেস, ছাতা বহন করতে পারবে না। আতশবাজি ও পটকা ব্যবহার নিষিদ্ধ। পাঞ্জা মিলানোর সময় কোন ভীতি সঞ্চার না করতে এবং রাতে পাঞ্জা মিলানো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে ডিএমপি। মিছিলে উচ্চমাত্রার শব্দ তৈরীর যন্ত্র যেমন পিএ সেট, ঢাক-ঢোল ইত্যাদি বাজানো যাবে না। মিছিলের মধ্যবর্তী স্থানে গ্যাপ, দুই বা ততোধিক মিছিলের মুখোমুখি অবস্থান, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছাড়া বিচ্ছিন্ন মিছিল ইত্যাদি বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে পূর্ব থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে রাত্রিকালে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাঁরা মিছিলে অংশগ্রহণ করবে তারা যাতে মিছিল শুরু হওয়ার পূর্বেই অংশগ্রহণ করে, মাঝপথে পার্শ্ব রাস্তা থেকে মিছিলে যোগ দেওয়া যাবে না।
২৭ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শিয়া ও অনেক সুন্নী সম্প্রদায়ও শোক পালন করবেন। এছাড়া অন্যান্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায় পবিত্র আশুরা উদযাপন করবেন। ইমামবাড়াগুলোতে সবমিলিয়ে ২৫ টি শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। সন্দেহজনক কোন কিছু মনে হলে পুলিশকে জানানো ও প্রয়োজনে ৯৯৯ বা ‘ম্যাসেজ টু কমিশনার’ (০১৩২০-০১০১০১, ০১৩২০-০২০২০২০) এ ফোন করার অনুরোধ করেছে ডিএমপি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: