গাজায় নিহত ছাড়াল ৬২ হাজার

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১৯ আগষ্ট ২০২৫ ০৮:০৮ এএম

টানা প্রায় দুই বছরের গণহত্যামূলক অভিযানে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও অবরোধের জেরে সৃষ্ট ক্ষুধা ও অনাহারের কারণে ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

অবরুদ্ধ এ অঞ্চলে কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই; প্রতিদিন মানুষ নিহত হচ্ছেন শুধু পরিবারের জন্য খাবার খুঁজতে গিয়ে। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় নগরী — এবং এখন কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত — গাজা সিটিতে ইসরায়েলি হামলা আরও জোরদার করা হয়েছে। ইসরায়েল এ শহর দখল করে হাজার হাজার মানুষকে জোরপূর্বক দক্ষিণে তথাকথিত কনসেন্ট্রেশন জোনে সরিয়ে নিতে চায়। সোমবার ভোর থেকে গাজা জুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে ১৪ জন ছিলেন সাহায্যপ্রত্যাশী।

আল জাজিরাকে এক চিকিৎসা সূত্র নিশ্চিত করেছে, গাজা সিটির আল-সাবরা এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত তিনজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে সাংবাদিক ইসলাম আল-কৌমিও রয়েছেন।

দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজযুম জানিয়েছেন, “গাজা সিটির পূর্বাঞ্চলে অব্যাহতভাবে হামলা চলছে। হামলার মাত্রা থেকে বোঝা যাচ্ছে, ইসরায়েলের বর্তমান কৌশল গাজার ভৌগোলিক ও জনসংখ্যাগত কাঠামো বদলে দিচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েল ভারী কামান, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন ব্যবহার করছে বাকি আবাসিক বাড়িগুলো ধ্বংস করার জন্য। ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা ভয়াবহ। এই সামরিক কৌশলই বলে দিচ্ছে যে ইসরায়েল সহজে স্থল অভিযান চালাতে পারবে এবং আবাসিক এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। স্থানীয়রা বলছেন, দিন-রাত হামলা অব্যাহত রয়েছে।”

যারা ইতোমধ্যেই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তারা আবারও গাজা সিটি ছেড়ে যাচ্ছেন। তবে অনেকে রয়ে গেছেন। গত রোববারও শহরটি ছিল হামলার মূল লক্ষ্য, সেদিন প্রায় ৬০ জন নিহত হন। একই সঙ্গে ইসরায়েল বাকি অল্প কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রকেও হামলার টার্গেট করছে।

ধ্বংসস্তূপ, অস্থায়ী আশ্রয় বা তাঁবুতে বেঁচে থাকা ফিলিস্তিনিদের অনেকেরই কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বিলাল আবু সিত্তা বলেন, “আমি সেখানে কীভাবে যাব? যাওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। দক্ষিণে যেতে প্রায় ৯০০ ডলার লাগে, আমার কাছে এক ডলারও নেই। আমি কীভাবে যাব?”

অন্যরা ইসরায়েলের দেওয়া আশ্রয় ও সাহায্যের প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখছেন না। নোয়ামান হামাদ বলেন, “আমরা ইসরায়েলের কাছ থেকে কিছুই চাই না। শুধু আমাদের সেই ঘরে ফেরার অনুমতি দিক, যেখান থেকে আমরা পালিয়েছিলাম— আমাদের আর কিছু দরকার নেই।”

এদিকে সামান্য আশার আলো দেখা দিয়েছে। কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির খসড়া মেনে নিয়েছে হামাস। আল জাজিরাকে এক সূত্র জানিয়েছে, এই চুক্তি কার্যকর হলে ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি হবে এবং গাজায় আটক রাখা ইসরায়েলি বন্দিদের অর্ধেক ও ইসরায়েলের কারাগারে আটক একাংশ ফিলিস্তিনিকেও মুক্তি দেওয়া হবে।

তবে ফিলিস্তিনিরা আগেও বহুবার এমন আশার ভরসায় প্রতারিত হয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারির স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধবিরতি মার্চে ইসরায়েল ভেঙে দেওয়ার পর থেকেই এই যুদ্ধ প্রবেশ করেছে মানবিক বিপর্যয়ের সবচেয়ে ভয়াবহ পর্যায়ে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর