সিরাজদিখানে এলিভেটেড রেললাইনের নিচে মাটি কাটা বন্ধে মানববন্ধন।

রুবেল ইসলাম তাহমিদ, মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নের পলাশপুর এলাকায় এলিভেটেড রেললাইনের নিচের মাটি কেটে বিক্রির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
রোববার (১৮ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার পলাশপুর এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অংশ নেন পলাশপুর গ্রামের বাসিন্দা আউয়াল মাদবর, মো. সিফাত উল্লাহ, মো. আনাউল্লাহ, মোহাম্মদ আলী ও আজগর মিয়াসহ স্থানীয় শতাধিক নারী,পুরুষ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নের পলাশপুর থেকে বালুচর ইউনিয়নের বেগমবাজার, পাইনাচর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় এলিভেটেড রেললাইনের নিচের মাটি কেটে বিক্রি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি। তারা অভিযোগ করেন, প্রতিদিন রাতের আঁধারে বেকু (এক্সক্যাভেটর) দিয়ে মাটি কেটে তা মাহিন্দ্রা ও ড্রম ট্রাকে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে রেললাইনের খুঁটি ও কাঠামো ঝুঁকির মুখে পড়েছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা আরো বলেন, রেললাইনের নিচ থেকে মাটি কাটা রেলওয়ের বিধি অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। তারা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও রেল কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ দাবি করেন। পলাশপুর গ্রামের বাসিন্দা আউয়াল মাদবর বলেন, রেললাইনের নিচ থেকে মাটি সরিয়ে ফেললে আমাদের এলাকার মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগ দেখা দেবে। আমাদের শিশুরাও গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। আমরা চাই, এই রাস্তাটি যেভাবে বর্তমানে আছে,সেইভাবেই সুন্দর ও নিরাপদভাবে সংরক্ষিত থাক। বিভিন্ন জায়গা থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে, যা আমরা কোনোভাবেই চাই না। তিনি আরো বলেন, বারবার উপজেলা প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের অভিযোগ, প্রভাবশালীরা প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের দাবি, প্রশাসন দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিক এবং এলাকাবাসীর নিরাপত্তা ও চলাচলের স্বার্থ রক্ষা করুক। পলাশপুর গ্রামের বাসিন্দা ও গণঅধিকার পরিষদের মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব মো. রাসেল হাসান বলেন, “এই রেললাইন নির্মাণের আগে এখানে একটি সরকারি রাস্তা ছিল। রেল নির্মাণকালে ওই রাস্তায় মাটি ফেলে শ্রমিকদের যান চলাচলের জন্য একটি অস্থায়ী রাস্তা তৈরি করা হয়। এতে এলাকাবাসীও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারতেন। কিন্তু এখন রাতের আঁধারে কিছু প্রভাবশালী সেই মাটি কেটে বিক্রি করছেন। আমি এ বিষয়ে প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধে দুটি মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা করা হয়েছে, এমনকি আমার ওপর হামলাও হয়েছে। আমি এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করেছি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও অবহিত করেছি।” তিনি আরও বলেন, এই রাস্তা এখনো এলাকাবাসীর চলাচলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। মাটি সরিয়ে ফেললে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। বর্ষা মৌসুমে সৃষ্ট গর্তে পানি জমে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে। আমরা চাই, এখান থেকে যেন মাটি না সরানো হয় এবং রাস্তা সচল রাখতে প্রশাসন উদ্যোগ নেয়। এ বিষয়ে সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা আক্তার বলেন, রেললাইন নির্মাণের সময় সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, কাজ শেষে রেললাইনের নিচে জমে থাকা অতিরিক্ত মাটি সরিয়ে নেওয়া হবে। এখন যেহেতু রেললাইন সম্পন্ন হয়েছে, তাই ওই মাটি সরানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মাটিটি সড়কের মতো হয়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা এটি ব্যবহার করতেন। এখন মাটি সরানোর কারণে তাদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে, তাই আপত্তি উঠেছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি, কী করা যায় তা বিবেচনায় নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, রেলওয়ের বিধি অনুযায়ী রেললাইনের নিচ থেকে মাটি কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
LIMON
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: