এ্যাক কলসি পানি আইন্না দেই হ্যারা আমারে পাঁচ টাহা দেয়

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ০৮ জুলাই ২০২৫ ১৫:০৭ পিএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫ ৩:২১ পিএম

পটুয়াখালী

জহিরুল ইসলাম চয়ন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি: "এ্যাক (এক) কলসি পানি আইন্না (এনে) দেই আর হ্যারা (তারা) আমারে পাঁচ টাহা (টাকা) দেয়, আমখলা অইতে (থেকে) গলাচিপা আইতে (আসতে) যে দোহান (দোকান)গুলো বাজে হেইয়ার (সেগুলোর) য্যাগো য্যাগো (যাদের) পানি লাগে, হ্যাগো (তাদেরকে) এক কলস পানি আইন্না দ্যালে (দিলে) ৫ টাহা দেয়।

অ্যাতে (তাতে) আমার প্রত্যেকদিন একশো-দেড়শো টাহা পাই, হ্যা (তা) দিয়া আমি খাই। টাহা পাইলে খাই , না পাইলে খাইনা। কোনো গুড়াগাড়া (ছেলে-মেয়ে) না থাহনে ৫ বছর আগে বউডাও (বউ) চইল্লা (চলে) গ্যাছে (গেছে)। এহন (এখন) একলা একলাই থাহি (থাকি)।" ঠোঁটের কোনায় মুচকি হেসে কথাগুলো বলছিলেন, পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে আশ্রিত বাসিন্দা জাফর (৫৬)।
 
আমখোলা ইউনিয়নের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান (পান্না) জানান,  তিনি পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ বাদুরা গ্রামের আজিমুদ্দী প্যাদা বাড়ির মুজু প্যাদার ছেলে। দীর্ঘ প্রায় ২৭ বছর ধরে তিনি আমখোলাতে দূরসম্পর্কের আত্মীয় মজিবর মিয়ার বাড়িতে আশ্রিত হিসেবে বসবাস করছেন।
 
তিনি আরো জানান, মানুষ যেখানে হাজারো টাকা উপার্জনের জন্য নানা রকম কৌশল অবলম্বন করে সেখানে জাফরের মত মানুষ সামান্য রুটি-কলা কিনে খাবার জন্য রোগাক্রান্ত ভঙ্গুর শরীর নিয়ে কাঁধে বহন করছে কলসি ভরা পানি, ছুটে চলে গ্রাম থেকে শহরে। যার কোনো ভাবনা নেই বর্তমান অথবা ভবিষ্যৎ নিয়ে। 
 
 আশ্রয়দাতা মজিবর মিয়া জানান, এক সময়  সে দিন মজুরি কাজ করে রোজগার করতো কিন্তু বয়স বেড়ে যাওয়ায় এবং শারীরিক দুর্বলতার কারণে কাজ করতে পারেনা। প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ কিমি পায়ে হেঁটে গলাচিপা শহরে যায় এবং দোকানে দোকানে প্রতি কলস পাঁচ টাকার বিনিময়ে পানি সরবরাহ করে। এতে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে খাবার কিনে খেতে হয়। যেদিন আয় করতে পারেনা সেদিন তাকে না খেয়েই দিনাতিপাত করতে হয়। আমি তাকে যতটুকু পারি সহযোগিতা করি। সে কোনো সরকারি অনুদান কিংবা সহযোগিতা পায়না। এমনকি তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পর্যন্ত নেই।  সে একটি বিয়ে করেছিল,  প্রায় ত্রিশ বছর আগে তার সে বউও তাকে ছেড়ে চলে যায়।  তার বাড়িতে জরাজীর্ণ একটা ঘর আছে সেখানে তার আরেকটি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ভাই আছে যে ঐখানে বাস করে। 
 
স্থানীয় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, সে দোকানে দোকানে পানি টেনে দিয়ে নিজের জীবন-যাপন করে। মাঝে মাঝে অসুস্থ হলে চিকিৎসা, ঔষধ ছাড়া না খেয়ে আশ্রিতের বাসায় পড়ে থাকে। বর্তমানে বাজার ১০০/১৫০ টাকা আয় দিয়ে সে কোনো মতে জীবন পাড় করে। শীত-বর্ষা-গ্রীস্ম সব সময়ই অতি কষ্টে জীবন-যাপন করতে হয়। সহজ-সরল, কিছুটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে সে অনেক কিছুই বুঝেনা। তাছাড়া তার জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার কারণে সরকারি-বেসরকারি কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা পায়না।
 
স্থানীয় চা দোকানী সিদ্দিক মিয়া জানান, সে শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারণে কোনো ভারি কাজ সে করতে পারেনা। এজন্য সে আমাদের দোকানে দোকানে পার্শ্ববর্তী কোনো নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে সরবরাহ করে থাকে। আমরা প্রতি কলস পানির বিনিময়ে ৫ টাকা করে দেই।
 
আমখোলা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি. সদস্য মো. শাহআলম জানান, আমি জাফরকে ব্যাক্তিগতভাবে চিনি। সে কোনো সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পায় কিনা আমি জানিনা। তবে আমি বিস্তারিত জেনে দেখবো।
 
স্থানীয়দের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার এনআইডি কার্ডের ব্যবস্থা করে তাকে সরকারি -বেসরকারি সহযোগিতার ব্যবস্থা করলে সে উপকৃত হবে। মানবতার জয় হবে।

LIMON

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর