'জামায়াত জনগণের ভালবাসা ও ম্যান্ডেট নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত'
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক জনাব মোবারক হোসাইন বলেছেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যদি জনগণের ভালবাসা ও ম্যান্ডেট নিয়ে রাষ্ট্রগঠনের সুযোগ পায়, তবে বাংলাদেশকে একটি ঘুষ-দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজ-দখলবাজ মুক্ত একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র উপহার দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি জামায়াতে ইসলামীকে রাষ্ট্রের সেবা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, অতীতে অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ও প্রতিহিংসামূলক মনোভাবের কারণে বহু নেতাকে অন্যায়ভাবে হয়রানি ও ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তথাকথিত ক্যাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে, দলীয় মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায়ে, আদালত চত্বর থেকে সাক্ষী গুম করে অন্য দেশে পাচার করে, স্কাইপ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে বিদেশ থেকে রায় লিখে এনে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদেরকে ফাঁসির দণ্ডে ঝুঁলিয়ে জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৮নভেম্বর) যশোর জেলা পরিষদ (বিডি হল) মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যশোর শহর, সদর ও পেশাজীবী থানার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব মোবারক হোসাইন এসব কথা বলেন।
এছাড়াও তিনি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন ও সংগঠনের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হল যে, আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না এবং আমাদের শহীদ সকল শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন, জাতি আজ সেই সত্যের সাক্ষী হল।
এ প্রসঙ্গে তিনি এ টি এম আজহারুল ইসলামের প্রসঙ্গ তুলে জানান, তিনি ছিলেন রাজনৈতিক অপব্যাখ্যা ও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের শিকার। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে তিনি আজ আবারও জাতির সামনে সত্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। মোবারক হোসাইন মনে করেন, এ ধরনের রায় জাতিকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে এবং এটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান অতিথি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছে যে, ২০২৬ এর জাতীয় নির্বাচন যেন কোনোভাবেই অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের মতো না হয়। তিনি বলেন, এই নির্বাচন হতে হবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। সাধারণ মানুষ যেন নিরাপদে, নির্বিঘ্নে এবং ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোট দিতে পারে- এটাই জাতির প্রত্যাশা। তিনি নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কোনো পক্ষপাতিত্ব গ্রহণযোগ্য হবে না। জাতির আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করে নির্বাচন কমিশনকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।
মোবারক হোসাইন মনে করেন, ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশাকে সম্মান জানানোই হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক বার্তা।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে মাঠে নির্বাচনী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যশোর জেলায় ইতোমধ্যে ছয়টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করে রাখার নানান প্রচেষ্টা চললেও জনগণ এখন আগের চেয়ে বেশি আগ্রহ ও প্রত্যাশা নিয়ে জামায়াতের দিকে তাকিয়ে আছে। ইসলামভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই সর্বস্তরের মানুষের প্রত্যাশা।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া) আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রসূল। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যশোর-১ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আজিজুর রহমান, যশোর-৩ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ভিপি আব্দুল কাদের, জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর সিদ্দিক, সহকারি সেক্রেটারি অধ্যাপক কুদ্দুস, মাওলানা রেজাউল করিম, অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম আবুল হাসিম রেজা, অফিস সেক্রেটারি নূর-ই-আলা নূর মামুন, গাজী মুকিদুল হকসহ অন্যান্য জেলা নেতৃবৃন্দ।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন যশোর শহর জামায়াতের আমীর অধ্যাপক শামসুজ্জামান। তিনি বলেন, “রুকনদের ত্যাগ, শৃঙ্খলা ও সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমেই দল শক্তিশালী ভিত্তিতে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: