যে ৩ টি প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল জামায়াত নেতাদেরকে ফাঁসির পূর্বে

২০১৫ সালের ৫ ই নভেম্বর রাত নয়টার কিছু পরে নয়া পল্টনের সিটি হার্ট ভবনের “ল কাউন্সিল” থেকে বাসায় ফেরার সময় ইস্কাটনের একটি চাইনীজ রেস্টুরেন্টে ডেকে নেয়া হয় সদ্য ফাঁসির আদেশ পাওয়া তখনকার জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন কে।
সে রাতে ব্যারিস্টার মোমেনের সঙ্গে লোকচক্ষু এড়িয়ে দেখা করেন একজন উচ্চপদস্ত সেনা কর্মকর্তা, শেখ হাসিনার একজন উপদেষ্টা ও রানা দাশগুপ্ত। জনাব মোমেনকে সেখানে তিনটি প্রস্তাব দেয়া হয়,
১। জামায়াতকে বিএনপি থেকে আলাদা হতে হবে।
২। রাষ্ট্রপতির কাছে একটা লোকদেখানো ক্ষমা চাইতে হবে (যেটা কেউ জানবে না)
৩। সামনের (২০১৮) নির্বাচনে তিনশ আসনে প্রার্থী দিতে হবে।
বিনিময়ে জামায়াতকে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তিনটি উপহারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।
১। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতকে ৫২টি আসনে বিজয়ী করা হবে এবং প্রধান বিরোধী দল করা হবে।
২। যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছিলো যেসব নেতাদের, কারোরই আর ফাঁসি হবে না। পর্যায়ক্রমে সবাইকে মুক্তি দেয়া হবে।
৩। জামায়াতের কোন নেতাকর্মীকেই কোন ধরণের মামলা হামলা কিংবা হয়রানির শিকার আর হতে হবে না, খুলে দেয়া হবে সারা দেশের সব কার্যালয়।
ব্যারিস্টার মোমেন তখন লেমোনেড, থাই স্যুপ আর চিকেন ফ্রাইয়ে সাজানো টেবিলেই সেই প্রস্তাব ডিনাই করেন। এরপর শেখ হাসিনার সামরিক সচিব এবং ঐ বৈঠকে উপস্থিত উপদেষ্টা তার ১৬ দিন পর ২১ নভেম্বর মধ্যরাত ১২টার কিছু পরে কারাগারে সরাসরি মাওলানা নিজামীর সঙ্গে দেখা করেন। এবং লিখিত প্রস্তাবগুলো পড়ে শোনান। উত্তরে মাওলানা নিজামী সব ধরণের সমঝোতার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে ক্ষমা চাইবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দেন। তৎকালীন জেলারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, সব জানতে পারবেন। ইস্কাটনের রেস্টুরেন্টের নাম না বললেও সবাই বুঝে গেছেন আই থিংক। ঐ রেস্টুরেন্টের মালিকও জানেন সেই বৈঠকের কথা। এবং দেশের বিশিষ্ট তিনজন সাংবাদিকও জানেন।
ততোদিনে জামায়াতের তিনজন এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি অলরেডি কার্যকর করে ফেলেছে সরকার। পরে জেনেছিলাম কাদের মোল্লার পর যে তিনজনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিলো তাদের প্রত্যেকের ফাঁসি কার্যকরের আগে তাদের পরিবার, ঘনিষ্টজনদেরকে এমন প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো হাসিনার তরফ থেকে।
একবার ভাবেন, সেদিন যদি জামায়াত এসব প্রস্তাব মেনে নিতো। তাহলে দেশের রাজনীতি কোন পথে যেতো? হাসিনা তো ২০৪১ এর সাফ কবলা ঠিকাদারিই পেয়ে যেতো, নাকি? তখন জাতীয় পার্টি পরিণত হতো জাতীয় ব্যান্ড পার্টিতে আর আজকের বিশাল বড় দলটিকে প্রতি ঈদের পর তীব্র আন্দোলনের ডাক দিয়ে তোরাবোরা পাহাড়ের অজ্ঞাত স্থান থেকে শুধু ভিডিওবার্তা-ই দিয়ে যেতে হতো।
বালির ট্রাকেরও একটা বিরাট গল্প আছে। ইতিহাসের আরো অনেক সত্যই সামনে আসবে, নিতে পারবেন তো? পপকর্ণ আর কোক নিয়ে বসেন।
জুবায়ের ফয়সাল, প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক
এআরএস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: