রণক্ষেত্র বিজয়নগর এখন সুনশান, নুরসহ আহত ৫০
আপডেট: ২৯ আগষ্ট ২০২৫ ১১:৪১ পিএম

রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় লাঠিচার্জ করে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ ও সেনা সদস্যদের বাধার মুখে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেনি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিজয়নগর আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে সংবাদ সম্মেলন করার আগ মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধাওয়া করে নেতাকর্মীদের। এ সময় লাঠিচার্জে দলটির সভাপতি নুরুল হক নুরসহ ৫০ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ জানান, আহত নুরকে কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পরে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা দলটির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে বিজয়নগর এলাকা ছেড়ে যায় তারা। পুরো এলাকা এখন শান্ত। দলটির নেতাকর্মী কেউ নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, রাত পৌনে দশটার দিকে ফেসবুক পেজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় নুরুল হক নুর আহত দাবি করে তার রক্তাক্ত ছবি পোস্ট করেছে গণঅধিকার পরিষদ। এর আগে মশাল মিছিল নিয়ে রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির অফিসের বিপরীতে অবস্থান নেয় গণঅধিকার পরিষদের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। তারা মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টি অফিসে যেতে চাইলে পুলিশ মাঝখানে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে।
শুক্রবার রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গণঅধিকারের নেতাকর্মীদের অবস্থান-বিক্ষোভে যান চলাচল বন্ধ ছিল। সংঘর্ষের ঘটনায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের দায়ী করে দলটি নিষিদ্ধ এবং জিএম কাদেরসহ অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শ্লোগান দেন তারা।
অন্যদিকে, পুলিশ ও সেনা সদস্যরা জাতীয় পার্টি অফিসের সামনে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। দলীয় অফিসে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদসহ নেতারা অবস্থান করছেন।
এর আগে জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীদের ওপর গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে অভিযোগ করে জড়িতদের বিচার দাবি করেন জাপার মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
রাতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। তাদের হামলায় দলের বেশ কয়েকজন নেতা আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। এ সময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন মিলন, আলমগীর সিকদার লোটন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একে অপরকে দায়ী করে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করে দল দুটির নেতারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ এবং দলটির নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে পল্টন জিরো পয়েন্টে সমাবেশ ডাকে গণঅধিকার পরিষদ। এই খবর পেয়ে জাতীয় পার্টির কাকরাইল অফিসে দলের মহাসচিব ব্যারিষ্টার শামীম পাটোয়ারী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, আলমগীর সিকদার লোটনসহ দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান নেন কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। গণঅধিকার পরিষদের সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ে যাওয়ার পথে শ্লোগান পাল্টা শ্লোগানে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে সংঘর্ষ হয়।
রমনা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আতিকুল আলম খন্দকর সাংবাদিকদের বলেন, সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। আমরা ঘটনাস্থলে আছি। বিস্তারিত পরে বলতে পারব।
গণঅধিকার পরিষদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করে তাৎক্ষণিক দলটির সভাপতি ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ছাত্রলীগ যুবলীগের ক্যাডারদের সঙ্গে ফাসিস্টের দোসর জিএম কাদেরের লোকজন বিনা উসকানিতে আমাদের মিছিলে হামলা চালিয়েছে। আমাদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ প্রায় ১০ জন আহত হয়েছে।
অন্যদিকে, এই ঘটনার জন্য গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছে জাতীয় পার্টি। দলটির নেতারা অভিযোগ করে বলেন, গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা আগেও আমাদের ওপর হামলা করে। তারা আজকেও মিছিল নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের ১০ থেকে ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: