জুলাই ঘোষণাপত্রে কিছুটা আশাহত হয়েছি: শিবির সভাপতি

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ০৯ আগষ্ট ২০২৫ ১১:০৮ এএম

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রটি সারা দেশের ছাত্রজনতার আশা আকাঙ্ক্ষার একটি জায়গা ছিল। আমরা খুব আশান্বিত ছিলাম সরকার সকলের মতামত এবং আকাঙ্ক্ষা মোতাবেক জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে। এটা ঘোষণার পর আমরা কিছুটা আশাহত হয়েছি।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) বিকেলে রাজশাহী কলেজে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে রাজশাহী কলেজ প্রশাসন ভবনের সামনে জুলাই শহীদ রায়হান আলীর প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে শিবিরের মহানগর শাখা আয়োজিত আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তিনি।

জুলাই ঘোষণাপত্রে জুলাই আন্দোলনের কৌশলকে অবজ্ঞা করা হয়েছে উল্লেখ করে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা এটি পূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয়নি। এই বাংলাদেশের ভূখণ্ড, জাতিসত্তার ইতিহাস, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ধারাকে ইগনোর করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনে ৯ দফা ছিল অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। সেই ৯ দফাটা এখানে আসেনি। জুলাই আন্দোলনের যে টোটাল পলিসি, আন্দোলনের প্যাটার্ন এবং গতি প্রকৃতির কৌশলগুলো অনেকটাই অবজ্ঞা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে রেমিট্যান্স যোদ্ধা, মিডিয়াকর্মীদের অনেক বেশি ভূমিকা ছিল, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, সেই বিষয়গুলো ঘোষণাপত্রে উঠে আসেনি। যদিও অনেক বিস্তৃত একটি ঘোষণাপত্র, কিন্তু এই সামান্য ছোট ছোট বিষয়গুলো সরকার অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি। সে জন্য আমাদের কাছে মনে হয়েছে এগুলো আরও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলিত হওয়া দরকার ছিল। আরও পূর্ণাঙ্গ হলে জুলাইকে ধারণ করার ক্ষেত্রে ভালো হতো।

সম্প্রতি গাজীপুরের সাংবাদিক হত্যা প্রসঙ্গে ছাত্রশিবির সভাপতি বলেন, এটা নির্মম ও মর্মান্তিক ছিল। জড়িতদের সরকার গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে এবং বিচার করবে বলে আশা করি। শুধু বিচারই নয়, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যবস্থা করবে। জোর দাবি থাকবে, বিষয়টা গুরুত্বসহকারে দেখবে।

ছাত্রদলের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টির বিষয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের ঐক্যের মধ্য দিয়েই জুলাই আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে। জুলাই প্রশ্নে আমরা এক। রাজনৈতিক ভিন্নতা, আদর্শের ভিন্নতা থাকবে, ভিন্ন মত আসবে, ভিন্ন বক্তব্য আসবে। তবে সেটা যেন স্বাভাবিক ক্রাইটেরিয়া লঙ্ঘন না করে, স্বাভাবিক সৌজন্যতা যেন সবাই বজায় রাখে। সৌজন্যতা আমাদের মাঝে থাকে, বক্তব্যে কেউ হয়ত অসংলগ্ন হয়ে যান।

গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের বিচারে ধীরগতির প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্য। সবকিছুর চাক্ষুষ প্রমাণ রয়েছে, দালিলিক প্রমাণ রয়েছে, ভিডিও রয়েছে, এরপরও এক বিচারে যে ধীরগতি এটা আমাদের হতাশ করে। শহীদ পরিবারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তারাও হতাশা প্রকাশ করেছেন। আমরা আশা করব, সরকার জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধারণ করে, বিপ্লবের স্পিরিটকে ধারণ করে এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করবে।

অনুষ্ঠানে নগর শিবিরের সভাপতি মোহা. শামীম উদ্দীননের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন শহীদ রায়হান আলীর বাবা মুসলেম উদ্দীন, রাজশাহীর আরেক শহীদ সাকিব আনজুমের বাবা মাইনুল হক, জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর আমির ড. মাওলানা কেরামত আলী, নায়েবে আমির ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জেলা সেক্রেটারি গোলাম মর্তুজা, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় এইচআরডি সম্পাদক ও নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দীন সরকার, ছাত্রশিবিরের সাবেক দাওয়াহ সম্পাদক হাফেজ নুরুজ্জামান, ছাত্রশিবিরের সাবেক মহানগর সভাপতি সারওয়ার জাহান প্রিন্স ও হাফেজ মো. খাইরুল ইসলাম প্রমুখ।

নগর শিবিরের সেক্রেটারি ইমরান নাজিরের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্পাদক মোহাম্মদ ইবরাহিম, মানবাধিকার সম্পাদক সিফাত উল আলম, ফাউন্ডেশন সম্পাদক আসাদুজ্জামান ভূইয়া, রাজশাহী মহানগরের অফিস সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেনসহ অন্য নেতারা।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর