রাজধানীতে এনসিপি ও ছাত্রদলের সমাবেশ, যান চলাচলে বিশেষ নির্দেশনা

রাজধানীতে আজ পৃথক দুই স্থানে সমাবেশ করবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতিও নিয়েছে সংগঠন দুটি। বড় জমায়েত করে শক্তি প্রদর্শনের ইঙ্গিত দিয়েছে দুপক্ষই। সারা দেশে থেকে কয়েক লাখ নেতাকর্মী যোগ দেবেন এই সমাবেশে।
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগ মোড়ে সমাবেশ করবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বেলা আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হবে। ছাত্রদলের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এছাড়া দলের সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি সাবেক ছাত্রনেতারা উপস্থিত থাকবেন। সমাবেশের কারণে জনদুর্ভোগের জন্য অগ্রিম দুঃখ প্রকাশ করেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করবে এনসিপি। বিকাল ৪টায় সমাবেশ শুরু করবে দলটি।
জানা গেছে, গত বছরের এই দিনে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা। শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয় টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের। দিনটি স্মরণ করতে এ সমাবেশ করছে ছাত্রদল ও গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি।
ছাত্রদলের সমাবেশকে সামনে রেখে সারা দেশের নেতাকর্মীদের রাজধানীতে আসার নির্দেশনা দিয়েছে সংগঠনটি। সেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রদলের ভূমিকা, তরুণদের কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার্থীদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার বার্তা দেবে সংগঠনটি।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে জনদুর্ভোগ হ্রাস, সুশৃঙ্খল করতে নেতাকর্মীদের নানা নির্দেশনা দিয়েছে ছাত্রদল। সংগঠনটির সহসভাপতি ডা. আউয়াল বলেন, এ দিনটি আমাদের কাছে স্মরণীয়। এই দিনে হাসিনার পদত্যাগের ডাক আসে। তাই দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে ঐতিহাসিক ছাত্র সমাবেশ হবে। এতে ছাত্রদলের লক্ষাধিক নেতাকর্মীর সমাগম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ছাত্রদলের নির্দেশনায় বলা হয়, ছাত্র সমাবেশে কোনো ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড নিয়ে আসা যাবে না। সমাবেশের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র কর্তৃক নির্ধারিত জায়গায় সব ইউনিটকে বাধ্যতামূলকভাবে অবস্থান করতে হবে। শাহবাগ এলাকায় একাধিক হাসপাতাল থাকার বিষয়টি বিবেচনা করেছে ছাত্রদল।
কাঁটাবন মোড় থেকে আজিজ সুপার মার্কেট ও পিজি হসপিটালের মাঝের গলি দিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহনের চলাচলে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সারা দেশ থেকে আসা গাড়ি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত শোডাউন ও মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসা যাবে না।
এদিকে সমাবেশ বাস্তবায়নের জন্য ২৫৪ জনের সমন্বয়ে ৯০টি টিম গঠন করেছে ছাত্রদল। জেলা, মহানগরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব এসব টিমকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৮৭ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জরুরি, প্রাথমিক সেবা ও প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স সেবা রাখা হয়েছে।
এদিকে সমাবেশ থেকে নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা করবে এনসিপি। গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতাকে বিকাল ৪টায় শহীদ মিনারে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণতা পায়নি এক বছরে। জুলাই সনদের মাধ্যমে হয়তো এর আংশিক পূরণ হবে। কিন্তু কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক অবস্থা এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে আসেনি।
সমাবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোববার (আজ) ঢাকা শহরে এইচএসসি পরীক্ষা রয়েছে, ছাত্রদলের প্রোগ্রাম রয়েছে, তারা আমাদের অনুরোধে কর্মসূচি স্থানান্তর করায় তাদের ধন্যবাদ জানায়। একই এলাকায় দুটি প্রোগ্রাম থাকায় ভোগান্তি হতে পারে এজন্য আমরা অগ্রিম দুঃখ প্রকাশ করছি।
বিকল্প সড়কে চলাচলের অনুরোধ ডিএমপির
সমাবেশকে কেন্দ্র করে শাহবাগ, শহীদ মিনার ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় প্রচুর জনসমাগম ঘটবে। বিশেষ করে শাহবাগ ক্রসিং দিয়ে যানচলাচল করানো সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ জন্য বিকল্প সড়ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিংয়ে সোজা শাহবাগের দিকে না গিয়ে বামে মোড় নিয়ে হেয়ার রোড/মিন্টু রোড হয়ে যাতায়াত করবে। কাঁটাবন মোড় থেকে সোজা শাহবাগের দিকে না গিয়ে ডানে মোড় নিয়ে নীলক্ষেত/পলাশী হয়ে অথবা বামে মোড় নিয়ে সোনারগাঁও (হাতিরপুল) রোড হয়ে বাংলামোটর লিংক রোড দিয়ে চলাচল করবে।
হাইকোর্ট/কদম ফোয়ারায় আসা যানবাহন মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগের দিকে না গিয়ে সোজা হেয়ার রোড/শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণি (মগবাজার রোড) হয়ে চলাচল করবে। অন্যদিকে কাকরাইল মসজিদ হয়ে আসা যানবাহন মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগের দিকে না গিয়ে সোজা হাইকোর্ট হয়ে গুলিস্তান/ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে চলাচল করবে।
টিএসটি/রাজু ভাস্কর্য থেকে শাহবাগের দিকে না গিয়ে দোয়েল চত্বর/নীলক্ষেত ক্রসিং হয়ে চলাচল করবে। শহীদ মিনার সংলগ্ন রাস্তাগুলো যথাসম্ভব পরিহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশপথগুলো যথাসম্ভব পরিহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: