লেডি ফেরাউন ৫ আগস্ট দিল্লি পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে: মামুনুল হক

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ০২ আগষ্ট ২০২৫ ২২:০৮ পিএম

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেছেন, ৫ আগস্ট এ যুগের লেডি ফেরাউন বাংলার ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎখাত হয়ে দেশ ছেড়ে দিল্লিতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

শনিবার বিকেলে খেলাফত মজলিস চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা শাখার আয়োজনে কচুয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শাপলা চত্বরে গণহত্যার বিচার, খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গণজোয়ার সৃষ্টি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা এবং তার দোসরা চেয়েছিল বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র ও তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি সেক্টরকে ভারতের হাতে তুলে দিয়ে দেশকে কার্যতঃ ভারতের অঙ্গ রাজ্যে পরিণত করার পাঁয়তারা করেছিল।

সেই শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রাজপথে একটি আন্দোলন গড়ে উঠেছিল সমন্বয় গড়ে উঠেছিল সর্বদলীয়, সেই সংগ্রামে এই দেশের আলেম সমাজ এ দেশের ইসলামপন্থিদের অনেক ত্যাগ এবং কোরবানি পেশ করতে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ইসলাম ও স্বাধীনতার দুশমনদের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। যারাই ইসলামের বিপক্ষে তারাই স্বাধীনতার দুশমন। কোনো তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে সংঘাত নয়, আল্লাহ প্রদত্ত রাজনৈতিক বন্দোবস্ত খেলাফতের ব্যবস্থা ছাড়া বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার সম্ভব নয়।

মামুনুল হক তার বক্তব্যে বলেন, 'দেশ হিসেবে গত ১৫ বছর ভারতের সম্পর্ক ছিল শেখ হাসিনার সঙ্গে। দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়া উপেক্ষা করেছে ভারত। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে দিল্লির পরামর্শ নিয়েছেন, তাদের দাসত্ব করেছেন। ক্ষমতা হারিয়ে তিনি সেই পরামর্শদাতার দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।'

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মনোনীত চাঁদপুর-১ কচুয়া আসনের প্রার্থী মুফতী আনিছুর রহমান কাসেমী।

মামুনুল হক তার বক্তব্যে বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে-খেলাফতের বাংলাদেশ। স্বাধীনতা এনেছি রক্ত দিয়ে প্রয়োজনে আবার জীবন দিয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করব। বিগত ১৫ বছর শেখ হাসিনা এ দেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ইসলামকে মাইনাস করতে গিয়ে তিনি নিজেই মাইনাস হয়ে গেছেন। আগামী দিনে যারা ইসলামকে উৎখাত করতে চাইবে, তারাই মাইনাস হবে।

মামুনুল হক আরো বলেন, ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। বাংলাদেশের ক্ষমতার মসনদে ইতিহাসের বর্বরতম জালিম ফ্যাসিবাদের ক্ষমতার মসনদে বসে থাকার ইতিহাস ১৫ বছরের ইতিহাস ঘুম খুন হত্যা এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম বাংলাদেশের সম্পদকে লুটপাট বাংলাদেশের রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করে ভিন্ন আরেকটি রাষ্ট্রের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবার জন্য বাংলার ক্ষমতার মসনদকে কুক্ষিগত করে রাখবার ইতিহাস।

বাংলাদেশের ক্ষমতার মসনদে ভিনদেশি দালালদের চক্র দখল করে রাখবার ইতিহাস। এবং সর্বোপরি বিগত ১৫ বছর বাংলাদেশের ক্ষমতার মসনদে বসে আওয়ামী দুঃশাসন ফ্যাসীবাদী সরকার বাংলাদেশ থেকে ইসলাম নিশ্চিহ্ন করার এমন কোনো ষড়যন্ত্র নেই যে তারা করেনি।

২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে ঘুমন্ত ইসলামী জনতাকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করেছে। ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে কোরান প্রেমী লোকদেরকে গুলি করে করে হত্যা করেছে। ২০২১ সালে নরেন্দ্রমোদীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করবার অপরাধে হেফাজতে ইসলাম তথা আলেম সমাজকে গুলি করে হত্যা করেছে।

বিগত ১৫ বছর অনেকেই জুলুমের শিকার হয়েছেন। অনেকের রক্ত ঝরেছে অনেকে জীবন দিয়েছে। তবে আমি আস্থার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে পবিত্র এই বাংলার মাটিতে আলেম সমাজের।

২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবে যারা রক্ত দিয়েছে জীবন দিয়েছে এর মধ্যে সকল ধর্মের সকল শ্রেণি পেশার সব বয়সের মানুষ রয়েছে মায়ের কোল থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সর্বশ্রেণির মানুষের রক্তের উপর জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে।

২০২১ সালে নরেন্দ্রমোদীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে ব্যবসাবানিজ্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শেখ হাসিনার রোষানলে পড়তে হয়েছে। তার আক্রমণ এবং টার্গেটে পরিণত হয়েছে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশকে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে কারাগারের আস্তাকুঁড় নিক্ষেপ করেছে মাসের পর মাস বছরের পর বছর। বিনাবিচারে আমাদের সঙ্গে কারাগারের অন্তরালে নির্মম আচরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সব নির্যাতন সহ্য করেছে সকলবর্বরতাকে মাথা পেতে নিয়েছে সব নির্যাতনের মধ্যেও আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জবাব দিয়েছি দেশ এবং ইসলামের প্রশ্নে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ জীবন দেবে মাথানত করবে না।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কচুয়া উপজেলার সভাপতি মুফতি নুরুল ইসলাম মাদানীর সভাপতিত্বে ও কচুয়া পৌর শাখার সভাপতি মুফতি রিয়াসুল হক মজুমদারের পরিচালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমদ, যুগ্ম-মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমাদ, ঢাকা মহানগর উত্তর সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি নেয়ামতউল্লাহ আমিন, চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি লিয়াকত হুসাইন, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান,কুমিল্লা জেলা পশ্চিমের সভাপতি আবু ইউসুফ মুন্সি ও কচুয়া মাদ্রাসার মোহতামিম আবু হানিফ প্রমুখ।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর