দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে ৭ কলেজ শিক্ষকদের কর্মবিরতি, স্থবির একাডেমিক কার্যক্রম

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ১১:১১ এএম

ঢাকার সরকারি সাত কলেজে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে শিক্ষকদের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি। প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ভর্তি নিশ্চায়ন ও শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনাকে ‘আইনসিদ্ধ নয়’ উল্লেখ করে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকরা টানা তিন দিনের কর্মসূচি পালন করছেন। এতে সাত কলেজজুড়ে সব ধরনের ক্লাস–পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, তিতুমীর কলেজসহ অন্যান্য ক্যাম্পাসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে শ্রেণিকক্ষে কোথাও কোনো পাঠদান হয়নি। অধিকাংশ কক্ষই তালাবদ্ধ বা ফাঁকা। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অন্যদিনের তুলনায় অনেক কম।

পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা কলেজ ইউনিটের বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সম্পাদক ড. মো. দিলুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। আমরা কোনো নির্দেশনাও পাইনি। মন্ত্রণালয়ের ক্লাসে ফেরার আহ্বান আমাদের নেতারা পর্যালোচনা করেছেন, তবে কর্মসূচি স্থগিত করার মতো কোনো নির্দেশনা কেন্দ্র থেকে আসেনি। তাই কর্মসূচি আগের মতোই চলছে।

এর আগে, গত ১৭ নভেম্বর ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত জরুরি সভা থেকে ১৮, ১৯ ও ২০ নভেম্বর তিন দিনের পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেন শিক্ষকরা। অভিযোগ করা হয়, সাত কলেজের জেনারেল মিটিং ও বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী প্রশাসক ভর্তি ও শ্রেণিকার্যক্রম সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছেন। এই ‘অসংগত ও আইনবহির্ভূত’ সিদ্ধান্তের কারণে নতুন জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষকরা। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তর্বর্তী প্রশাসকের তিন কার্যদিবসের মধ্যে পদত্যাগ দাবি করা হয়।

শিক্ষক নেতাদের অভিযোগ, প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এর আগে ভর্তি নিশ্চায়ন বা শ্রেণিকার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা দেওয়া হলে তা আইনি জটিলতা তৈরি করে। সরকারি কলেজে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের ওই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কোনো একাডেমিক কাজে যুক্ত হওয়ার বিধিবদ্ধ সুযোগ নেই। তাই এই সিদ্ধান্তকে তারা ‘অপ্রযোজ্য ও বাস্তব বিবর্জিত’ বলে অভিহিত করেন।

এদিকে কর্মবিরতির কারণে সাত কলেজের ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের নতুন শিক্ষার্থীরা ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসে ঘুরেও কোনো ধরনের সেবা পাচ্ছেন না। এতে ভোগান্তি বাড়ছে।

ঢাকা কলেজের নতুন শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসান বলেন, দুই দিন ধরে কলেজে আসছি। কাউন্টারে গিয়ে জানা যাচ্ছে, ভর্তিসংক্রান্ত সব কাজ বন্ধ। আবার অনলাইনে ভর্তির নোটিশ দেওয়া আছে। এখন কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না।

ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী শ্রাবণী আক্তার বলেন, আমরা প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে ক্লাস শুরুর অপেক্ষায় ছিলাম। এখন কর্মবিরতির কারণে কোনো শিক্ষকের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। বিভাগেও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় কাগজপত্র জমা দিতে হবে তার কিছুই বুঝতে পারছি না।

তবে এরইমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিলসহ রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে একীভূত করে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নতুন একটি স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত ধারণা, অসম্পূর্ণ তথ্য বা গুজবের ভিত্তিতে বিভ্রান্তি বা পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি না করে সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করবেন। একইসাথে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান শিক্ষা জীবন এবং সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার জন্যও বিশেষভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর