তারেক সিদ্দিক দুর্নীতির মাধ্যমে সংযোজন করেন এই লক্কর-ঝক্কর বিমান

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিশুসহ বহু মানুষ হতাহত হওয়ার অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনায় বাকরুদ্ধ গোটা জাতি। বিমান বাহিনীতে বহু বছরের পুরোনো বিমান ব্যবহার করায় ক্ষোভ ঝাড়ছেন জনতা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি বাহিনীকে পিছিয়ে রেখে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য দায়ী করা হচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসি
খুনি হাসিনার এই আত্মীয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে বিমান বাহিনীর সরঞ্জাম ক্রয়ের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বহু আগে থেকে। কিন্তু ক্ষমতায় থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাননি কেউ। সংশ্লিষ্ট বিষয়টি অবগত রয়েছেন এমন সূত্র সামাজিক মাধ্যমে দাবি করেছেন, তারিক আহমেদ সিদ্দিকি প্রতিরক্ষা ক্রয়ে, বিশেষ করে বিমান বাহিনীর সরঞ্জাম ক্রয়ে ব্যাপক প্রভাব রাখতেন এবং কমিশন বাণিজ্য থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
আয়নাঘরের এই মাস্টারমাইন্ডের বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালের পর মিগ-২৯ এবং ফ্রিগেট বিএনএস বঙ্গবন্ধু ক্রয়সংক্রান্ত দুর্নীতির বিষয়েও দুদকে মামলা হয়েছিল, যেখানে শেখ হাসিনার সাথে তারিক সিদ্দিকও আসামি ছিলেন। তবে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সেই মামলাগুলো নিষ্পত্তি করে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তারেক সহ মোট ১৯ জনের বিরুদ্ধে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চারটি মামলা দায়ের করেছে।
পতিত স্বৈরাচার ভারতীয় সেবাদাসরা পরিকল্পিতভাবে দুর্নীতি আর লুটপাটের মাধ্যমে দেশের সামরিক বাহিনীকে পিছিয়ে রেখেছিল। পতনের এক বছর পরেও তাদের বিচারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয় নাই। তাদের দুর্নীতির মাধ্যমে কেনা ১৯৬৬ সালের চাইনিজ রেপ্লিকা বিমান দিয়ে কি আমরা এখনো পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেব?-প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা।
সমালোচকরা বলছেন, এটাকে কেবল যান্ত্রিক ত্রুটি বলে পার পাবার সুযোগ নেই। এর পেছনে পতিত আওয়ামী লীগের অপর্যাপ্ত বাজেট প্রণয়ন ও বরাদ্দ, দুর্নীতি এবং ভারতের ইচ্ছায় বাহিনীকে পিছিয়ে রাখার দুরভিসন্ধি রয়েছে। ক্ষোভ জানিয়ে তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের আকাশে এখনো উড়ছে সত্তর দশকের প্লেন। যেগুলো আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে অচল তো বটেই, প্রশিক্ষণেও অযোগ্য। বিশ্বের অনেক দেশ এসব বিমান ২০-৩০ বছর আগেই রিসাইক্লিং কারখানায় পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমরা? আমরা এখনো আমাদের প্রতিভাবান, অনুপ্রাণিত, উদ্যমী তরুণ পাইলটদের হাতে তুলে দিচ্ছি সেই ভাঙারি প্লেন। এর নাম আত্মঘাতী অবহেলা।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, বাহিনীকে পিছিয়ে রাখার কারণে মেধাবী পাইলটরা এখন বিমান বাহিনীতে যোগ দিতে অনুৎসাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে অনেক পাইলট চুপিসারে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।অন্যদিকে, একজন পাইলট তৈরি করতে লাগে কোটি কোটি টাকা, বছর বছর সময়, শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তা এবং জাতির সেরা মেধা। আর দেশবিরোধী আওয়ামী সরকার বাজেটের কারসাজি আর দুর্নীতির মাধ্যমে সেই প্রাণটা ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়ে গেছে। এই মৃত্যুর দায় অবশ্যই তাদের নিতে হবে।
এরআগে গতবছরের ২০২৪ সালের ৯ মে একজন বীর পাইলট, স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ, প্রশিক্ষণ মিশনের সময় একটি যান্ত্রিক ত্রুটিপূর্ণ বিমানে প্রাণ হারান।
উল্লেখ্য, তারিক আহমেদ সিদ্দিকের হস্তক্ষেপে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রাডার নির্মাণ কাজে 'অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড' নামে একটি কোম্পানিকে অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা হয়। এতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। থ্যালেস এলএএস ফ্রান্স এসএএস নামে একটি কোম্পানির রাডার বসানোর কাজ চলমান থাকলেও, অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে এবং এতে নিয়ম লঙ্ঘন করে জি টু জি (সরকার থেকে সরকার) পদ্ধতিতে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল সম্প্রসারণ প্রকল্পে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এখানে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা করা হয় এবং পছন্দসই ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এবং তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে পৃথক চারটি মামলা দায়ের করেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তারিক আহমেদ সিদ্দিকী ২৮ কোটি ৫৯ লাখ ৬৩ হাজার ২৩২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তার নামে থাকা চারটি ব্যাংক হিসাবে মোট ৬২ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন সংঘটিত হয়েছে। তার স্ত্রী শাহিন সিদ্দিকী এবং দুই মেয়ে নুরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও বুশরা সিদ্দিকীর বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
LIMON
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: