চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে হত্যা, যুবদল নেতা মঈনসহ দুজন গ্রেপ্তার

রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় চাঁদা না দেওয়ায় মো. সোহাগ (৪৩) নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে যুবদল নেতা পরিচয়ধারী এক ব্যক্তি ও তার সহযোগীরা।
বুধবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবদল নেতা মঈনসহ দুজনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি ঘনীভূত হয় এবং জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
নিহত সোহাগ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রজনী ঘোষ লেনে ভাঙারি ব্যবসা পরিচালনা করতেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত মঈন নিজেকে যুবদলের চকবাজার থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বলে পরিচয় দিয়ে এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, হুমকি এবং দখলদারির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত সোহাগের বন্ধু মামুন জানান, গত দুই-তিন মাস ধরে মঈন নিয়মিতভাবে সোহাগের কাছে চাঁদা দাবি করছিল। সোহাগ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কিছুদিন আগে মঈন তার দোকানের সামনে এসে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলে, ‘তুই পারবি না পালাতে, দেখে নেব তোকে।’ সেই হুমকিরই বাস্তবায়ন ঘটে বুধবার সন্ধ্যায়। মঈনসহ আরও ৪-৫ জন সোহাগকে একা পেয়ে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তার মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে। হামলাকারীরা সোহাগের শরীর থেকে পোশাক খুলে ফেলে এবং অমানবিকভাবে মারধর করে। ঘটনাস্থলেই সোহাগের মৃত্যু হয়। মামুন জানান, তারা ভয়েই কেউ এগিয়ে যেতে পারেননি, কারণ মঈন এলাকার চিহ্নিত দুর্বৃত্ত এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে এসব অপকর্ম চালিয়ে আসছে।
অভিযুক্ত মঈনের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও মিটফোর্ড হাসপাতালের আশপাশের ফুটপাত ও রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে ঘুস বাণিজ্যসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বহুবার তাকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
এদিকে, লালবাগ থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাব্বি বলেন, “আমি মঈনকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি, সে যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী। তবে চকবাজার থানা যুবদলের কোনো কার্যকর কমিটি নেই বহুদিন ধরে। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সে এ ধরনের নৃশংস কাজ করবে, তা আমার বিশ্বাস হয় না।” তবে তার এই মন্তব্য অনেকের কাছেই দায়সারা ও দায় এড়ানোর চেষ্টা হিসেবে মনে হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “ভাঙারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। ইতিমধ্যে মঈন ও জনি নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও এবং স্থানীয়দের বয়ান মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, এটি পূর্বপরিকল্পিত ও সংগঠিত হত্যাকাণ্ড। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এই নৃশংসতার দ্রুত বিচার ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন।
LIMON
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: