গুলিবিদ্ধ হয়েও আন্দোলনে ফের গুলিতে চোখ নষ্ট

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০৪ এএম

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আবু সাঈদের শাহাদতবরণ পুরো দেশকে জাগিয়ে তুলেছিল। রংপুরে তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর ক্ষোভে রাস্তায় নেমে আসেন লাখ লাখ তরুণ-যুবক।

তাদের অন্যতম ছিলেন ফেনীর ছাগলনাইয়া পৌরসভার দক্ষিণ মধুপুর এলাকার সায়েদুল ইসলাম সাকিব। প্রথমদিকে ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত হন। গোপনে চিকিৎসা নিয়ে আবারো রাজপথে ফেরেন। পরে হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েও বাড়িতে জানাননি। পরদিন পুনরায় মিছিলে গেলে চোখে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় হাসপাতালে। সুচিকিৎসার অভাবে নিভে গেছে তার বাঁ চোখের দৃষ্টি।

জুলাইযোদ্ধা সাকিব বলেন, গত বছরের ১৬ জুলাই আবু সাঈদকে হত্যা দৃশ্য দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। ঝাঁপিয়ে পড়ি আন্দোলনে। পরদিন ফেনীর রাস্তায় নেমে ছাত্রলীগের হামলায় আহত হই। এরপরও এলাকায় যতগুলো বিক্ষোভ-মিছিল হয়েছে প্রায় সবটিতেই বন্ধু ও সহপাঠীদের নিয়ে অংশ নেই, কিন্তু পরিবারে কেউ জানত না।

তিনি জানান, ৪ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনার পদত্যাগের একদফা দাবিতে জেলার মহিপালে উড়াল সেতুর নিচে ছাত্র-জনতার কর্মসূচিতে যোগ দিলে হাতে গুলি লাগে। বাড়িতে কাউকে না জানিয়েই চিকিৎসা নিয়ে কোনো রকম সুস্থ হই। পরদিন আবারো রাস্তায় নামলে চোখে গুলি লাগে। এতে আর রাজপথে নামতে পারিনি, সেই থেকে হাসপাতালের বিছানায় কাটে দিনা-রাত।

অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে সাকিবের বাবা নুরুল আলম বলেন, আন্দোলনে সাকিব একাধিকবার আহত হলেও আমরা জানতে পারি পরে। চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর আমরা খবর পাই। সেই থেকে তাকে নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। প্রথমদিকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি নিজ খরচে। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও কিছুদিন আমরাই সব খরচ দিয়েছি। পরে সরকারিভাবে চিকিৎসা হলেও আনুষঙ্গিক সব ব্যয় আমাদেরই বহন করতে হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, চট্টগ্রামে চিকিৎসকরা ব্যর্থ হলে মাসখানেক আগে সরকারের সহায়তায় সাকিবকে রাজধানীর চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এর আগেই যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে যায়। তাই ঢাকায় নিয়েও কাজ হয়নি, নষ্ট হয়ে গেছে এ জুলাইযোদ্ধার বাঁ চোখ। উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো তাকে চিরদিনের জন্য দৃষ্টি হারাতে হতো না। এখন তারা অপর চোখ নিয়েও শঙ্কায় আছেন।

আহত সাকিবের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, অর্থাভাবে সাকিবের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারিনি। ২৫ এপ্রিল অস্ত্রোপচারে তার বাঁ চোখটি অপসারণ করা হয়। ঝুঁকিতে পড়েছে অপর চোখও। সাকিব কর্মক্ষম হওয়ার আগেই তার বড় ক্ষতি হয়ে গেল। তার বাবা অসুস্থ, আমিও গৃহিণী। আমাদের এখন সংসারের চাকায় গতি ফেরানো দায়। সাকিবের ভবিষ্যৎ ভাবার সুযোগ পাচ্ছি না। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে লাখ খানেক টাকা দেওয়া হয়েছিল তা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ছেলেকে সরকার পুনর্বাসন না করলে সে কী করে খাবে?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেনী জেলার সাবেক সমন্বয়ক ওমর ফারুক বলেন, আহত সাকিবের চোখ হারানোর জন্য সরকার ও জুলাই ফাউন্ডেশনের নীরব ভূমিকাই দায়ী। আগেই সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করলে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটত না। তার মতো এখনো অনেক জুলাইযোদ্ধা হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে তাদের উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। অথচ সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগই চোখে পড়ছে না।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর