জুলাই হত্যা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় সোমবার

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ১১:১১ এএম

জুলাই মাসে সারাদেশে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, তার সবগুলোর বিচার করা সম্ভব ছিল না আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের। কারণ, সব হত্যায় অপরাধের বিচার করলে শেখ হাসিনার বিচার শেষ করতে লেগে যেত কয়েক বছর। এ কারণে সব হিসেব মিলিয়ে প্রসিকিউশন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেছে বেছে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি অভিযোগ আনে। এই পাঁচ অভিযোগেই শেখ হাসিনার রায় দেখবে পুরো বিশ্ব।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটি হলো তিনি গণভবনে বসে ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা ও নাতিপুতি বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা ও সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে হামলা চালায়। এর মাধ্যমে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন করা হয়। এসব ঘটনায় আসামিদের প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায় এসেছে শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের ওপর।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগ, তিনি আন্দোলনকারীদের দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি, ড্রোন দিয়ে আন্দোলনকারীদের খুঁজে বের করে এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এই নির্দেশ বাস্তবায়নে তাদের অধীনস্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেন। এর মাধ্যমে আসামিরা অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ প্রদান, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই হত্যাকাণ্ডে তাদের নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন হয়েছে।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার চাঁনখারপুল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ছয়জন ছাত্র নিহত হন। এ ঘটনায়ও শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

পঞ্চম ও শেষ অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের লাশ পুড়িয়ে দেয়া এবং একইসঙ্গে গুরুতর আহত একজনকে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ঘটনায় তিন আসামি কর্তৃক হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ পাঁচ অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে এমনটি দাবি করে প্রসিকিউশন বলছে, যে ৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন, যে যুক্তিতর্ক, ভিডিও-অডিও তারা দিয়েছেন, তাতে শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজাই প্রাপ্য। তবে সবকিছু বিবেচনায় এখন সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারকে হাতে। সেখানেই ঠিক হবে জুলাই হত্যার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনাকে তারা খালাস দেবেন, নাকি সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেবেন। তবে তিন বিচারকের হাতে অপশন আছে আমৃত্যু কারাদণ্ড বা নির্দিষ্ট মেয়াদে জেল দেয়ারও।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর