ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি আলোচনা, সহস্রাধিক বন্দি বিনিময়ের সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২৫ ১২:০৭ পিএম

ছবি : রয়টার্স

রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল তুরস্কের ইস্তানবুলে তাদের তৃতীয় দফা শান্তি আলোচনা সম্পন্ন করেছে। বুধবারের (২৩ জুলাই) এই আলোচনার মূল অর্জন হিসেবে দুই পক্ষ অন্তত এক হাজার ২০০ জন করে বন্দি বিনিময়ে সম্মত হয়েছে। খবর আনাদুলুর।

তুরস্কের স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৩৭ মিনিটে আলোচনার শুরু হয়ে চলে রাত ৯টা ১৬ মিনিট পর্যন্ত। সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখে এবং অংশগ্রহণকারী দেশগুলো তাদের নিজ নিজ পর্যবেক্ষক ও মিডিয়া ছাড়াই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনার পর রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের প্রধান ভ্লাদিমির মেদিনস্কি সংবাদমাধ্যমকে জানান, রাজনৈতিক, মানবিক এবং সামরিক বিষয়ক বিষয়গুলো পৃথকভাবে আলোচনার জন্য রাশিয়ার পক্ষ থেকে তিনটি অনলাইন ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে আমাদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রস্তাবনা রয়েছে। এই তিনটি কর্মপর্যায়ের মাধ্যমে আমরা চাই আলোচনার অগ্রগতি হোক পরিকল্পিতভাবে।”

বন্দি বিনিময়ে নতুন চুক্তি

রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়পক্ষই অন্তত ১,২০০ জন বন্দিকে পরস্পরের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। মেদিনস্কি বলেন, শুধু সামরিক সদস্য নয়, বেসামরিক লোকদেরও এই বিনিময়ে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে মস্কো।

তিনি আরও জানান, “আমরা প্রস্তাব করেছি ইউক্রেন যেন কুরস্ক অঞ্চলে আটক করা প্রায় ৩০ জন রাশিয়ান বেসামরিক নাগরিককে অন্তর্ভুক্ত করে। যুদ্ধের সময় তারা ভুলক্রমে সীমান্ত অতিক্রম করেছিল।

 

মেদিনস্কি বলেন, “রাশিয়া এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রায় সাত হাজার সেনার মরদেহ ফেরত দিয়েছে এবং আরও তিন হাজার মরদেহ হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। যখনই ইউক্রেন এই মরদেহগুলো গ্রহণের জন্য কারিগরি দিক থেকে প্রস্তুত হবে, রেড ক্রসের সহায়তায় তা হস্তান্তর করা হবে।”

রাশিয়া এ সময় ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়, যাতে আহত সৈন্যদের উদ্ধার এবং নিহতদের মরদেহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।

মেদিনস্কি বলেন, “আমরা আবারো ইউক্রেনের কাছে প্রস্তাব রেখেছি, বর্তমান সংঘাত রেখায় সীমিত সময়ের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হোক। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার এই বিরতিতে চিকিৎসা দল আহতদের উদ্ধার করতে পারবে এবং নিহতদের মরদেহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।”

তিনি আরও জানান, “এই মুহূর্তে গ্রে জোনে চিকিৎসা উদ্ধারকর্মীরা চরম ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছে। ড্রোনের নিরবিচার তদারকির কারণে আহতদের উদ্ধার প্রক্রিয়া অত্যন্ত অনিশ্চিত ও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।”

শিশু প্রত্যাবাসন নিয়ে বিতর্ক

ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া হাজার হাজার শিশু ‘জোরপূর্বক অপহরণ’ করে রাশিয়ায় নিয়ে গেছে এবং সেগুলোকে ‘দেখাশোনা’র নামে আটক রাখা হয়েছে।

 

তবে মেদিনস্কি এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “আমরা ইউক্রেনের দেওয়া ৩৩৯ শিশুর একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা পর্যালোচনা করেছি। এই তালিকার প্রতিটি নাম ও পরিচয় আমরা যাচাই করেছি। এর মধ্যে কয়েকজন শিশুকে ইতোমধ্যেই ইউক্রেনে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।”

তিনি আরও দাবি করেন, ইউক্রেন যেসব শিশুর ব্যাপারে অভিযোগ করেছে, তাদের অনেকেই কখনোই রাশিয়ায় ছিল না। তার কথায়, “এই তালিকার অধিকাংশ শিশুই ইউরোপের কোথাও রয়েছে বলে আমাদের ধারণা। তাদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।”

তবে রাশিয়ায় যারা রয়েছে, তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, “যদি কোনো শিশুর বাবা-মা, নিকট আত্মীয় কিংবা বৈধ অভিভাবককে শনাক্ত করা যায়, তাহলে সেই শিশুদের তাৎক্ষণিকভাবে ফেরত পাঠানো হবে।”

LIMON

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর