ফজলুর রহমানের মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ডাকসু নেতাদের

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২২:০৯ পিএম

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা (তিন মাসের জন্য সব পদ স্থগিত করেছে দলটি) অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের করা অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নেতারা।

তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘বিক্রি হয়ে যাওয়া মস্তিষ্ক’, 'ট্রেন্ডে গা ভাসানো’, 'দাসী' ও 'পশ্চাদপদ' আখ্যায়িত করা কেবল অযৌক্তিক নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মর্যাদা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের ওপর সরাসরি আঘাত।

একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে হাটহাজারি মাদরাসার সঙ্গে তুলনা করে ফজলুর রহমান যে মন্তব্য করেছেন, সেটিকে ডাকসু "ঘৃণ্য ও বর্ণবাদী" হিসেবে অভিহিত করেছে।

রোববার রাতে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ এক বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার ক্ষেত্র। এটি দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার এবং শতবর্ষ ধরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমান মর্যাদায় শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টি-কালচারাল প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।

রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এ ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য শিক্ষার্থীদের অপমানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাসকেও কলঙ্কিত করে। তিনি অবিলম্বে ফজলুর রহমানকে শিক্ষার্থীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।

এ প্রসঙ্গে ডাকসুর এজিএস মহিউদ্দিন খান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলার অবহেলিত মানুষের স্বার্থরক্ষায়। মক্তব ও মাদরাসা থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীরা যখন নিজেদের পরিচয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করছেন, তখন একটি গোষ্ঠীর গাত্রদাহ স্পষ্ট হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সমাজের একটি শ্রেণীকে অচ্ছুত হিসেবে উপস্থাপন করা কি বর্ণবাদ নয়? মহিউদ্দিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাইরের কোনো শক্তি রাজনৈতিক পরাজয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের ছোট করার চেষ্টা করলে ডাকসু শিক্ষার্থীদের নিয়ে তার জবাব দেবে।

এদিকে অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে ডাকসু নেতারা মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছেন ডাকসু সদস্য তাজিনুর রহমান।

অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকেও আলাদা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানকে নিয়ে ছড়ানো অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, উপাচার্য জীবনের কোনো পর্যায়েই কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ফলে তাকে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত করে প্রচারিত বক্তব্য সম্পূর্ণ বানোয়াট ও বিদ্বেষমূলক।

জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক ফররুখ মাহমুদ স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপাচার্য সম্পর্কে এই ধরনের অসত্য বক্তব্য কেবল তার ব্যক্তিগত মর্যাদাকেই ক্ষুণ্ন করেনি, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামকেও আঘাত করছে।

‘এটা ডাকসু ইলেকশন নয়, সিনিয়র মাদরাসা ইলেকশন

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ‘সিনিয়র মাদরাসার ইলেকশন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন বিএনপির আলোচিত নেতা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান। তার অভিযোগ, সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুবিধার কারণে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা দলে দলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে, যা ডাকসুর নির্বাচনি চরিত্রকে পরিবর্তিত করেছে।

সম্প্রতি একটি টকশোতে অংশ নিয়ে ফজলুর রহমান আরও বলেন, এটা কোনো ডাকসু ইলেকশন না। হাটহাজারী মাদরাসায় যত ছাত্র আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কাছাকাছি ছাত্র আছে। এটা সিনিয়র মাদরাসার একটা ইলেকশন। এই সর্বনাশটা করে গেছে শেখ হাসিনা নিজে।

তিনি দাবি করেন, মাদরাসার শিক্ষার্থীরা দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় সাধারণত ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেলেও ইংরেজিতে লেটার পায় না। অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় (স্কুল-কলেজে) শিক্ষার্থীরা গড়ে ৬০-৭০ শতাংশ নম্বর অর্জন করে থাকে। এই ব্যবধানের কারণে আলিম পাস করা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে, কিন্তু সাধারণ লাইন থেকে আসা শিক্ষার্থীরা তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে।

ফজলুর রহমানের মতে, এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরপন্থি ও ইসলামপন্থি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে শিক্ষাঙ্গনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর