টেস্টে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার নাম ওপেনিং জুটি

ভিক্টর নুয়াচির করা অফস্টাম্পের বাইরের বলে স্ট্রেইট ড্রাইভ খেলার চেষ্টা করেন সাদমান ইসলাম। বল ব্যাটে লেগে চলে যায় গালিতে থাকা ব্রায়ান বেনেটের হাতে। তাতে সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি ভাঙে ৩১ রানে। মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে ১২তম বারের ওপেনিংয়ে নামেন সাদমান ইসলাম। কখনই দুজন মিলে ওপেনিং জুটিতে ৫০ পার করতে না পারা এই জুটি গতকাল স্কোরবোর্ডে যোগ করে ৩১ রান। এটাই এই জুটির দ্বিতীয় সর্বোচ সংগ্রহ।
এর আগে ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ৪৩ রান তুলেছিলেন তারা। ওপেনিংয়ে তাদের দুজনের এমন দুর্দশাতে স্পষ্ট লাল বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশ কতটা অসহায়। কথাটা আরেকটু স্পষ্ট হবে যদি ২০২৪ সাল থেকে বাংলাদেশের খেলা ইনিংসগুলোর দিকে একটু নজর দেওয়া যায়। জিম্বাবুয়ে টেস্টের প্রথম ইনিংস পর্যন্ত ২১ ইনিংসে মাত্র দুবার ওপেনিং জুটি থেকে ৫০ বা তারচেয়ে বেশি রান পেয়েছে বাংলাদেশ। এতসব পরিসংখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কতটা দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় আছে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি।
২০২৪ সাল থেকে টেস্ট ক্রিকেটে তিন ক্রিকেটারকে দিয়ে ইনিংসের গোড়াপত্তন করিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার ওপেনিং করেছেন সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান। তারা ৮ বার ইনিংসের গোড়াপত্তন করেন। এ সময়ে তাদের ব্যাটে এসেছে মোটে ২৪১ রান। ২০২৪ সাল থেকে ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশের ইনিংসে যে দুবার পঞ্চাশোর্ধ রান হয়েছে, তা এসেছে সাদমান-জাকিরের ব্যাটে। সাদা দৃষ্টিতে ২০২৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এটাই বাংলাদেশের সেরা ওপেনিং জুটি। দুবার পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটি গড়ার পাশাপাশি রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের ১০ উইকেটের জয় নিশ্চিতও করেন তারা দুজনে। অবশ্য ওই ম্যাচে জয়ের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্যই ছিল মোটে ৩০ রান।
২০২৪ সাল থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ বার বাংলাদেশের টেস্ট ইনিংসের গোড়াপত্তন করেন মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান ইসলাম। এ সময়ে ওপেনিং জুটিতে তারা দুজনে যোগ করেন মাত্র ৭৪ রান। ওপেনিংয়ে এই জুটির দুর্দশা অবশ্য নতুন নয়। ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগ পর্যন্ত ৬ বার ইনিংসের উদ্বোধন করে তারা দুজনে যোগ করেছিলেন মাত্র ৮৫ রান। তবুও ২০২৪ সাল থেকে তাদের দুজনের ওপর ভরসা রাখছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট।
সাদমানের সঙ্গে ওপেনিংয়ে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়া মাহমুদুল হাসান জয় আরেক ওপেনার জাকির হাসানের সঙ্গে নেমেও খুব একটা ভালো করতে পারেননি। ২০২৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে ৬ বার ওপেনিং করেন। এ সময়ে জয়-জাকির মিলে ইনিংসের গোড়াপত্তন করে দলের স্কোরবোর্ডে যোগ করেছেন ১১৬ রান। গত বছর চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে তারা দুজন মিলে যোগ করেন ৪২ রান। এটাই ২০২৪ সাল থেকে এই জুটির সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
ঘুরেফিরে যখন এ তিনজনের ওপরই ভরসা রাখা হচ্ছে ওপেনিংয়ে, তখন পরিসংখ্যানের দিকে আরেকটু ভালোভাবে চোখ বুলানো যাক। ২০২৪ সাল থেকে ২১ ইনিংসের মধ্যে ৭ বার ওপেনিং জুটি ভেঙেছে ১০ রানের আগে আর রানের খাতা খোলার আগে জুটি ভেঙেছে দুবার। এ ছাড়া ১১ থেকে ২০ রানের মধ্যে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি ভেঙেছে ৬ বার। আর ২১ থেকে ৩০ রানের মধ্যে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি ভেঙেছে ৩ বার। এসব পরিসংখ্যানে স্পষ্ট ওপেনিং জুটি নিয়ে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তার ভাঁজ কতটা।
ওপেনিং জুটি যেমন ব্যর্থ, ঠিক তেমনই ব্যর্থ ওপেনাররাও। ওপেনিং জুটি ভাঙার পর ওপেনাররা নিজেরাও খুব বেশিবার নিজেদের ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২০২৪ সাল থেকে এই তিন ওপেনারের কাছ থেকে হাফ সেঞ্চুরি এসেছে মোটে চারটি। যার মধ্যে তিনটি করেছেন সাদমান ইসলাম আর জাকির হাসানের ব্যাটে হাফ সেঞ্চুরি এসেছে একটি। অন্যদিকে মাহমুদুল হাসান জয় ১৩ ইনিংস খেলে করতে পারেননি কোনো হাফ সেঞ্চুরি। তাতে স্পষ্ট জুটিতে যেমন ব্যর্থ ওপেনাররা, ঠিক তেমনি নিজেদের ব্যাটেও রান তুলতে ব্যর্থ তারা।
২০২৪ সাল থেকে তিন ওপেনিং জুটির পরিসংখ্যান
জুটির নাম ইনিংস রান সর্বোচ্চ
সাদমান ইসলাম-জাকির হাসান ৮ ২৪১ ৬২
মাহমুদুল হাসান জয়-জাকির হাসান ৬ ১১৬ ৪৭
মাহমুদুল হাসান জয়-সাদমান ইসলাম ৭ ৭৪ ৩১
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: