বিএনপি নেতা খুন, ছাত্রদল নেতাসহ ১৩ জনের নামে মামলা

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ২২:১১ পিএম

আসামি খোরশেদ আলম ও কাউছার মানিক বাদল

লক্ষ্মীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি নেতা আবুল কালাম জহিরকে (৫০) কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এতে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য কাউছার মানিক বাদলসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ফেসবুকে সক্রিয় থাকলেও গ্রেপ্তার হয়নি মামলার দ্বিতীয় আসামি কাউছার।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী আইরিন আক্তার বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় রোববার (১৬ নভেম্বর) ভোরে আটক ইমন হোসেন (২১), আলমগীর হোসেন (৪০) ও হুমায়ুন কবির সেলিমকে (৫০) গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ।

এদিকে কাউছার গ্রেপ্তার না হলেও ফেসবুকে সক্রিয় রয়েছেন। ফেসবুকে মামলার এজাহারের ছবি দিয়ে লিখেছেন ‘এটা কোনো কথা, বাদী এই আইরিন কে’? আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমার ৩ ভাইরে মামলা দিয়ে মামলার মেরিট নষ্ট করে দিছেন, বাদী জহিরের দ্বিতীয় বউ’। ইমনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় সিসিটিভির একটি ফুটেজ পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘ইমন ছেলেটাকে ধরে নিয়েছে। ঘটনার সময় সে ২নং পোলে মামুনের দোকানে ছিল। সিসিটিভির ভিডিও তাই প্রমাণ করে। আমার কথা হচ্ছে আবুল কালাম জহির হত্যায় প্রকৃত খুলিদের আড়াল করার জন্য এমন কিছু হচ্ছে, নাকি সঠিক তদন্ত হলে রাঘববোয়াল ফাঁসবে এই জন্য কি এমন হচ্ছে’।

অভিযুক্ত কাউছার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের মৃত বশির উল্যার ছেলে। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- খোরশেদ আলম, মিজানুর রহমান মল্লিক, শামসুল আলম মল্লিক, শাহ আলম, রাহাত হোসেন বাবু, স্বপন, রিয়াজ ওরফে চিতা, আজিম হোসেন হারুন ও আব্দুল খালেক। তারা চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। খোরশেদ মামলার প্রথম আসামি। কয়েক মাস আগে ৫টি দেশীয় অস্ত্র ও গুলিসহসহ তাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় এসে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে পুনরায় জড়িয়ে পড়েন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিবাদীরা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সক্রিয় সদস্য এবং লিডার। জহির মৃত্যুর আগে তার মৃত্যু সংক্রান্ত ঘটনায় বিবাদীদের বিষয়ে ভিডিও করে বাদী আইরিনের কাছে পাঠিয়েছেন। তিনি জীবদ্দশায় বিবাদীদের দ্বারা খুন-গুম হতে পারেন বলে বাদীর কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করতেন। অভিযুক্তদের ভয়ে জহিরের প্রথম স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মীয় স্বজনরা কেউই থানায় মামলা করতে সাহস পাচ্ছিল না।

জহির একজন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের মোস্তফার দোকান এলাকায় তার ব্যক্তিগত কার্যালয় ছিল। প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ৮টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে স্থানীয় পাঁচপাড়া সড়কের পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের জনৈক ফারুকের বাড়ির সামনের পাকা রাস্তার ওপর তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। অভিযুক্তরা আগ থেকে ওত পেতে ছিল। আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যেই গলার ডান পাশে, বুকে ও বুকের নিচে চারটি গুলি করে। এছাড়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে কপালের ডানে ও বামে আঘাত করে মাথার খুলি ফাঁক করে ফেলে। মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশেও ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে তাকে রাস্তার ওপর ফেলে রেখে অভিযুক্তরা পালিয়ে যান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জহির চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের মনছুর আহমেদের ছেলে। শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাতে পশ্চিম লতিফপুর এলাকায় তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। জহিরের সাথে স্থানীয় ছাত্রদল কর্মী কাউছারের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। সম্প্রতি এলাকায় একটি খেলার আয়োজন নিয়ে বিরোধ বেড়ে যায়। এর জের ধরেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাউছার হত্যাসহ কয়েকটি মামলার পলাতক আসামি। অন্যদিকে আবুল কালামের বিরুদ্ধেও ৬টি মাদকসহ ৭ মামলা এবং একাধিক জিডি রয়েছে।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চাইলে বাদী আইরিন আক্তার বলেন, এ ঘটনায় আমি কোনো কিছু বলতে চাচ্ছি না। তিনি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফয়জুল আজীম বলেন, নিহতের স্ত্রী খুনের ঘটনায় মামলা করেছেন। ইতোমধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর