৫ দফা দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলোর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:১০ পিএম

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০ অক্টোবর (সোমবার) রাজধানীতে, ২৫ অক্টোবর (শনিবার) সব বিভাগীয় শহরে এবং ২৭ অক্টোবর (সোমবার) সারাদেশের সব জেলা-উপজেলায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

রোববার (১৯ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ৮টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা চতুর্থ দফায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এদিন প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ দ্রুতই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজনের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জনগণের দাবিসমূহ কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় জনগণের দাবি আদায়ের জন্য গণআন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তাই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও উক্ত আদেশের উপর আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করে তার আলোকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ে তুলতে রাজপথের এই আন্দোলন।

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। দেশের প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। দেশে কোনো সরকার না থাকায় সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়। সংবিধানের অনেক বিধানাবলি অকার্যকর হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এ সরকারের বৈধতার উৎস এবং ভিত্তি হচ্ছে সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৭ এ বর্ণিত বিধানের জনগণের অভিপ্রায়। সেই অভিপ্রায় বলেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ দিতে হবে।

পিআর পদ্ধতির যৌক্তিকতা তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, কোয়ালিটি-সম্পন্ন পার্লামেন্ট এবং দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ প্রতিটি ভোট মূল্যায়নের লক্ষ্যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।

এদিন সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলোর ৫ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো:

১) জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও উক্ত আদেশের উপর আগামী নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা।

২) আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা।

৩) অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা।

৪) ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা।

৫) স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ বলেন, আগামী ২৭ অক্টোবরের মধ্যে দাবি মানা না হলে দেশব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। এ সময় নেতৃবৃন্দ ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ডক্টর আমহদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশে খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির মহাসচিব নিজামুল হক নাইম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

LIMON

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর