ভেদাভেদ ভুলে আলেমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জামায়াতের

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, শুধু নির্বাচনের জন্যই নয়, আগামী দিনে যাতে আলেমদের ওপর আর কেউ জুলুম করতে না পারে সেজন্য সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ইসলামপন্থিদের ঐক্যের জন্য জামায়াতে ইসলামী উদার।
রোববার (২৫ মে) দুপুরে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের ঐক্য ভাবনায় করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগ আলেম-ওলামাদের ওপর সবচেয়ে বেশি জুলুম করেছে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের জুলুমের শিকার হয়েছে। তবে আলেমদের ওপর বেশি জুলুম হয়েছে। আলেম সমাজ একই প্ল্যাটফর্মে জোটবদ্ধ থাকলে আগামীতে কেউ আলেমদের ওপর জুলুম করার দুঃসাহসিকতা দেখাতে পারবে না। আলেমদের মাইনাস করে আধিপাত্যবাদ, ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন কেউ দেখতে পারবে না।
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার সব আন্দোলন-সংগ্রামে আলেমদের অবদান ও ত্যাগ জাতি চিরকাল মনে রাখবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫ আগস্টও হাসিনা পালিয়ে যাবে, এটা কেউ ভাবেনি। কিন্তু জীবনের মায়া ত্যাগ করে আলেমরাই ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আলেমরাই রাজপথে ছিল। বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্ব ইসলামপন্থিদের দিতে হলে অবশ্যই ঐক্যের বিকল্প নেই। জামায়াত আমির ইতোপূর্বে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের একটি ব্যালট করতে যতটা ছাড় ও উদারতার প্রয়োজন হয় জামায়াতে ইসলামী তা করবে।
সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ১৭৫৭ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়ে ওলামা-মাশায়েখদের আন্দোলনের সামনের সারিতে রাখা হয়েছে। ইসলামপন্থিরা সামনের সারিতে থেকে জীবন ও রক্ত দিয়েছে। কিন্তু পরে দেখা গেছে ইসলাম বিদ্বেষীরা ওই আন্দোলনের ভূমিকা হাইজ্যাক করে নিজেদের অর্জন দাবি করে। যা স্পষ্ট প্রতীয়মান ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে।
তিনি বলেন, এই আন্দোলনে যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসার ১৭ জন ছাত্র শহীদ হলেও গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী একটি দলের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি দাবি করেন তিনি নাকি যাত্রাবাড়ীতে ধর ধর বলে চিৎকার করেছেন আর আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেছে। এতেই যাত্রাবাড়ী স্বাধীন হয়ে গেছে। যেখানে তিনি ইতিহাস বিকৃত করে একক ক্রেডিট নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সারা দেশে এই আন্দোলনে যত আহত হয়েছেন এবং শহীদ হয়েছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেম, হাফেজসহ ইসলামপন্থিরা আহত ও শহীদ হয়েছেন। সবশেষ শহীদ হয়েছেন নোয়াখালীর কোরআনের হাফেজ হাসান। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামপন্থিদের নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষীরা যেই ন্যারেটিভ প্রচার করেছে সেটি জনগণের কাছে এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। জনগণ বিশ্বাস করে ইসলামপন্থিদের হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ ও দুর্নীতি মুক্ত একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন সম্ভব।
জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজির সভাপতিত্বে রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় ইসলামপন্থিদের ঐক্য ভাবনায় করণীয় শীর্ষক মতামত উপস্থাপন করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশের নায়েবে আমির আহম্মদ আলী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ড. মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বাসার, এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক মাওলানা সানা উল্লাহ খান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওলামা বিভাগের ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মোশাররফ হোসেন, মুফতি মোহাম্মদ আলী, মুফতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, মাওলানা মোহাম্মদ শাহ আলম, মুফতি সাকীবুন কাসেমী, মাওলানা আকরাম হোসাইন, মাওলানা মিন সুফিয়ান, হাফেজ মাওলানা মুফতি আহম্মদ বিন হাবিব, মুফতি আবু নোমান রহমানী, মুফতি এমদাদ উল্লাহ, মুফতি ইমাজ উদ্দিন, মুফতি আব্দুল আজিজ প্রমুখ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: