‘১৭ বছর খাইনি, এখন খাব’ বিএনপির দুই নেতার ফোনালাপ ফাঁস

রাজশাহী ও নওগাঁর বিএনপির দুই নেতার ঠিকাদারির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মাহবুবুর রহমান (রুবেল) গত সোমবার ৯ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ফোনালাপে নওগাঁর এক ঠিকাদারকে অশ্লীল ভাষায় শাসিয়েছেন। নওগাঁর ঠিকাদার শাহজাহান আলী মান্দা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য।
রাজশাহীর রুবেল ফোনালাপে বলেন, ‘১৭ বছর খাইনি, এখন খাব।’ জবাবে নওগাঁর নেতা বলেন, ‘আমিও ১৬ বছর পর কাজ পেয়েছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) রাজশাহীর বৃক্ষ পালনবিদের কার্যালয় থেকে ৯টি লটে গাছ বিক্রির জন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে দরপত্র আহবান করা হয়। এতে অংশ নেন শাহজাহান আলী।
দরপত্র জমা দেওয়ার দিন মাহবুবুরসহ কয়েকজন ঠিকাদার সওজ কার্যালয়ে অবস্থান নেন, যাতে বাইরের কেউ দরপত্র জমা দিতে না পারেন। তবে শাহজাহান আলী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে রাখা বাক্সে দরপত্র জমা দেন এবং প্রায় ছয় লাখ টাকায় দুটি লটের কাজ পান। ইতোমধ্যে তাকে টাকা জমা দিতে বৃক্ষপালনবিদের কার্যালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঠিকাদার শাহজাহান আলী বলেন, ‘ওদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। সড়ক অফিসও ওই এলাকায়। ওদের অনেক কথাই থাকে। আমাকে ফোন করে বলেছে। আমার তো কিছু করার নেই।’
বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অনেক ছেলেপিলে থাকে। তাদেরও দাবিদাওয়া থাকে একটা কাজ হলে। কিন্তু শাহজাহান দেখা করেনি। তাই ফোন করে দুইটা কথা বলেছি। এটা ঠিক হয়নি।’ অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজের বিষয়ে মাহবুবুর বলেন, ‘খুব রাগ হয়েছিল তাই বলেছি।’
ফোনালাপের শুরুতে শাহজাহানকে রাজশাহীর নেতা মাহবুবুর বলেন, ‘রোডসে আর টেন্ডার সাবমিট করবেন না।’ শাহজাহান কারণ জানতে চাইলে মাহবুবুর বলেন, ‘কারণ, আমরা নিজেরাই খাইতে পাচ্ছি না। আমার কথা হলো আপনি ভাই টেন্ডার-মেন্ডার দিয়েন না, আমার অনুরোধ থাকল। আমরা ১৭ বছর খাইতে পারিনি, এখন আমরা খাব।’
শাহজাহান টেন্ডার সাবমিট হয়ে গেছে জানালে মাহবুবুর অশ্লীল ভাষায় কথা বলা শুরু করেন। শাহজাহান তখন ভদ্রভাবে কথা বলার অনুরোধ করেন। এরপর মাহবুবুরের থেকে ফোন নেন হারুন। তিনি নিজেকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হুমায়ুন কবীরের ভাই বলে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, ‘এর পরে টেন্ডার হলে আপনি আমাদের সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করবেন। আপনার ভাই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই টেন্ডার ড্রপ করে।’
শাহজাহান বলেন, ‘আপনার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই তো করি ভাই। আমরা তো বুঝি। যে এলাকার কাজ সে এলাকার কিছু দাবি থাকে। ব্যবসা করি গোটা বাংলাদেশে, এটা আমরা বুঝি। সুতরাং যেটাই হোক করা হবে। কারণ আমাদের দিকেও দেখতে হবে। একটা লট পেয়েছি ১৬ বছর পর। আমি ভাই রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলেরও শিক্ষা সম্পাদক ছিলাম। আমি আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবই ভাই, আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না।’
এ সময় হারুন বলেন, ‘ঈদের আর বেশিদিন নাই। আপনি আসেন, এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করে যান।’ শাহজাহান তখন বলেন, ‘লটটা (গাছ) আগে কাটি, তার পরে তো দুই পয়সা হবে, তাই না? কেবল তো টাকা জমার অর্ডার হলো। আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করে ব্যবসা করতে পারব? ব্যবসা করলে তো (রাজশাহীর) লক্ষ্মীপুরে আপনাদের কাছে যেতে হবে। আমি আসব।’
হারুন বলতে থাকেন, ‘এইডা বইলেন না। সমাধান আপনাকে ঈদের আগেই করতে হবে এবং খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে।’ শাহজাহান বলেন, ‘ঈদের আগে তো লটই কাটতে পারব না। আমাদেরও তো ঈদ-টিদ আছে, বুঝেননি?’ হারুন বলেন, ‘আপনাকে দু-এক দিনের মধ্যেই করতে হবে। সবাই (দরপত্রে গাছ কেনা অন্য ঠিকাদাররাও) তা-ই করবে।’
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: