এনসিপির ভেতরের তথ্য যাচ্ছে বাইরে, নেপথ্যে কারা

প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০৪ এএম

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে আত্মপ্রকাশ করে। তারপর গত দুই মাসে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির তিনটি সাধারণ সভা হয়েছে। এ ছাড়া ছোটবড় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা। এসব সভা চলা অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাইরে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি যেসব সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাইরে না জানাতে সতর্ক করা হয় সেসবও ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।

এনসিপি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দলের নেতারা মনে করছেন, এর পেছনে দলেরই কয়েকজন নেতার হাত রয়েছে। আর তারা এনসিপিতে এসেছেন বিশেষ একটি দল থেকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে দলটির তৃতীয় সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দলের জেলা কমিটি গঠন, সদস্য সংগ্রহ অভিযান, সাংগঠনিক কর্মসূচিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও যুগ্ম সদস্য সচিব এ বি এম গাজী সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীরসহ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ওই সভা চলাকালীন ভেতরের আলোচনা বা সিদ্ধান্ত নিয়ে বাইরের একাধিক ব্যক্তিকে ফেসবুকে পোস্ট করতে দেখা গেছে। এমনকি একটি জাতীয় দৈনিকে এনসিপির নেতাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের আলোচনাও ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে দলটির নেতাদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে।

দলটির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, দলের ভেতরের আলোচনা এভাবে বাইরে চলে আসাটা উদ্বেগ ও শঙ্কার। সেখানে যদি হোয়াটসঅ্যাপের মতো সিক্রেট গ্রুপের আলাপ গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে যায়, তা দলকে ভেতর থেকে শেষ করে দেবে। এ যেন ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। এদের চিহ্নিত করতে হবে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে নতুন দল হিসেবে এনসিপি ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে।

ওই সভার পর গত সোমবার দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সদস্যদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত শৃঙ্খলা ভঙ্গসংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তে উচ্চক্ষমতার ১২ সদস্যের একটি ‘শৃঙ্খলা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। দলের এক নম্বর যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিনকে কমিটির প্রধান করা হয়। তবে দলের ভেতরের তথ্যফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার কোনো উদ্যোগ এখনো এনসিপিতে দেখা যায়নি। এমন প্রেক্ষাপটে চতুর্থ সাধারণ সভা হতে যাচ্ছে আজ শনিবার।

একাধিক সূত্রমতে, প্রাথমিকভাবে এনসিপির কয়েকজন নেতা তথ্যফাঁস বা বাইরে ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। দলের ভেতরেও তাদের আলাদা বলয় তৈরির চেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। এদের মধ্যে অন্তত তিনজন নেতা আগে গণঅধিকার পরিষদের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এর বাইরেও রয়েছেন আরো অন্তত তিনজন। এদের মধ্যে যুগ্ম সদস্য সচিবসহ অন্যান্য পদধারীও রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এনসিপির ভেতরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে দেখা যায়।

গণমাধ্যমে তথ্যফাঁস হওয়ার দিন বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে নিজেদের আইডিতে এনসিপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা পোস্ট দেন। এর মধ্যে একজন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। তাতে তিনি লিখেন- ‘সাংবাদিকতা আর গুপ্তচরবৃত্তির পার্থক্য জানা দরকার, শেম।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি অভ্যন্তরীণ তদন্তের মধ্যে রয়েছে। জড়িতদের চিহ্নিত করে দল শক্ত ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে এনসিপির চতুর্থ সাধারণ সভায় দলটির নির্বাহী কমিটি গঠনসহ সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে একাধিক সূত্রে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর