রিকশাচালকদের জীবনমান উন্নয়নে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের কর্মশালা

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:১২ পিএম

রিকশাচালকদের জীবনমান উন্নয়ন, সচেতনতা বৃদ্ধি ও কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রিকশাচালকদের নিয়ে ‘জীবনমান উন্নয়ন কর্মশালা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর আফতাবনগরে অবস্থিত আস-সুন্নাহ অডিটোরিয়ামে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে পাঁচ শত রিকশাচালক অংশগ্রহণ করেন।

কর্মশালায় উত্তম আচরণ, পারিবারিক দায়িত্ববোধ, স্বাস্থ্যসচেতনতা, মাদক ও ধূমপানের ভয়াবহতা, ট্রাফিক আইন ও সড়ক নিরাপত্তা, স্বল্প আয়ে সংসার পরিচালনা, সঞ্চয়ের উপায়, ইসলামে শ্রমের মর্যাদা ও হালাল উপার্জনের গুরুত্ব সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণ।

কর্মশালায় প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি উত্তম আচরণ ও পারিবারিক দায়িত্ব বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। রিকশাচালকরা সমাজ উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ উল্লেখ করে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা এই শহরের প্রাণ। আপনাদের চাকা বন্ধ থাকলে স্থবির হয়ে যায় নগরবাসীর জীবন। তাই রিকশাচালক হিসেবে হীনমন্যতায় ভোগার কোনো সুযোগ নেই। মহান আল্লাহর কাছে মর্যাদা নির্ণয় হয় পেশাগত পরিচয়ের ভিত্তিতে নয়; বরং মর্যাদা নির্ণিত হয় মানুষের চিন্তা ও কর্মের মাধ্যমে। যে যত বেশি তাকওয়াবান, আল্লাহর কাছে তিনি তত বেশি সম্মানিত।

এছাড়াও তিনি সকলকে উত্তম আচরণ, সততা, আমানতদারিতা ও পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান। একইসাথে, কষ্টে উপার্জিত হালাল টাকায় সন্তানদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ দেন তিনি।

ইসলামে শ্রমের মর্যাদা ও হালাল উপার্জনের গুরুত্ব বিষয়ে আলোচনা করেন মিরপুর মসিজদুল জুমা কমপ্লেক্সের খতীব আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘হারাম উপার্জনের প্রাসাদের চেয়ে হালাল রুজির কুঁড়েঘর অনেক বেশি প্রশান্তির। একজন রিকশাচালক রোদে পুড়ে যেটুকু উপার্জন করেন, তাতে যে বরকত রয়েছে—তা অনেক বিলাসী জীবনেও নেই।’

রিকশাচালকদের পেশাগত কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি ও তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল আলম সুমন। এছাড়া স্বল্প আয়ে সংসার পরিচালনা ও সঞ্চয়ের উপায় বিষয়ে বাস্তবসম্মত পরামর্শ দেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী সাব্বির আহম্মেদ।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে ‘রাস্তায় নিরাপত্তা ও ট্রাফিক আইন’ বিষয়ে বিশেষ সেশন পরিচালনা করেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গুলশান) মো. জিয়াউর রহমান ও বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাবিবুর রহমান।

এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনে অংশ নিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন উপস্থিত রিকশাচালকরা। রামপুরা থেকে আসা কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী একজন রিকশাচালক নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের নিয়ে কেউ এভাবে ভাবে না। রাস্তায় মানুষ অনেক সময় আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। কিন্তু আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন আজ আমাদের ডেকে এনে যে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে, তা আমি জীবনেও ভুলব না। এখানকার কথাগুলো আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। মনে হচ্ছে আমরাও সমাজের সম্মানিত মানুষ।’

অর্ধদিনব্যাপী এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারী রিকশাচালকদের আপ্যায়নের বিষয়েও বিশেষ গুরুত্ব দেয় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। সকালে উপস্থিত হওয়ার পর তাদের মাঝে নাস্তা পরিবেশন করা হয় এবং কর্মশালা শেষে সকলকে দেয়া হয় দুপুরের খাবার।

এছাড়াও অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক রিকশাচালককে একটি টি-শার্ট ও একটি উন্নতমানের শীতের হুডি উপহার দেয়া হয়। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ ঘোষণা দেন, আজকের প্রশিক্ষণের ওপর ভিত্তি করে যারা নিজেদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবে, তাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত একজনকে ওমরাহ পালনের সুযোগ দেয়া হবে।

আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তা জানান, আফতাবনগরে অবস্থিত তাদের ৬০০ আসনবিশিষ্ট নিজস্ব অডিটোরিয়ামে এখন থেকে বছরজুড়ে নিয়মিত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য পেশাভিত্তিক জীবনমান উন্নয়ন ও দাওয়াহমূলক বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হবে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর