১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব নয়: আসিফ মাহমুদ

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ০৭ নভেম্বর ২০২৫ ২১:১১ পিএম

বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় ১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

তিনি বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় আসলে যাদের কালোটাকা আছে, তাদেরই সুযোগ আছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার। সে জন্য আমাদেরও বারবার চিন্তা করতে হয়, ইলেকশন কী করব, না করব না। করলে কীভাবে করব। মানুষ টাকা ছাড়া ভোট দেবে কি না।

শুক্রবার (০৭ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত ‘নভেম্বর থেকে জুলাই: বিপ্লব থেকে বিপ্লবে’ শিরোনামে এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন আসিফ মাহমুদ।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ক্ষেত্রে আসলে ঘুরে ফিরে একই জায়গায় আমরা চলে যাই কি না, এই যে আমরা গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কথা বলি, সংসদে ৩০০ জন যাবেন। ৩০০ জনের মধ্যে একটা প্রশ্ন, এইখানে কয়জনের ২০ কোটি টাকা আছে, ২০ কোটি টাকা না থাকলে কেউ নির্বাচন করতে পারবে না। মানে বাংলাদেশের যে বর্তমান বাস্তবতা এই বাস্তবতায় অন্তত ১০-২০ কোটি টাকা না হলে কারো নির্বাচন করার মানে নেই। করতে পারবে, নমিনেশন কিনতে পারবে কিন্তু জামানত বাজেয়াপ্ত হবে আর কি।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, এই বাস্তবতায় আসলেই যাদের কাছে ওই কালো টাকা আছে তাদেরই সুযোগ আছে আজকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অথবা কাউকে যদি কেউ দেয়। আপনি আবার কারো থেকে টাকা নিয়ে নির্বাচন করবেন, নির্বাচিত হয়ে আসার পর আপনাকে তার স্বার্থ বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, যদি আজকে কোনও ব্যবসায়ী থেকে বা যদি অন্য যে কারো থেকে আপনি টাকা নিয়ে ইলেকশন করেন তাহলে আপনাকে... সেজন্য আমাদেরও বারবার চিন্তা করতে হয় ইলেকশন করব নাকি করব না। করলে কীভাবে করব? মানুষ কি টাকা ছাড়া ভোট দেবে কি না বা যেই বিদ্যমান কাঠামো এই কাঠামোতে ইলেকশন করা আমাদের জন্য আসলে কতটুকু বাস্তবসম্মত।

আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, অনেকে জোহরান মামদানির কথা বলেন, এটা এক্সেপশনাল কেস, এক্সেপশনাল কেস ৩০০ আসনে ঘটা সম্ভব না, এটা হয়তো এই ইলেকশনে দেখবেন দুই একজনের জন্য ঘটে যাচ্ছে। কিন্তু ৩০০ জনের জন্য আর ঘটবে না বা এই এক্সেপশনাল কেস দিয়ে আপনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিতে পারবেন না, সরকার গঠন করতে পারবেন না।

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টাও বোধ হয় হয়নি, আমাদের রাজনৈতিক নেতারা এস্টাবলিশমেন্টের কোলে গিয়ে উঠে গেছেন। তো তরুণ হিসেবে আমাদেরও ভুল আছে, আমরা ২৫-২৬ বছরের কয়েকজন তরুণ ছিলাম পলিসি মেকিংয়ের দায়িত্বে। কিন্তু যখন আমাদের অগ্রজরা এস্টাবলিশমেন্টকে গিয়ে দায়িত্ব দিয়ে আসেন, যে আপনারা একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন, তখন আমাদের হাতে আসলে খুব বেশি কিছু থাকে না।

আসিফ মাহমুদ দাবি করেন, তারা তখন ‘এস্টাবলিশমেন্টের কাছে’ রাজনৈতিক নেতাদের না যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তাদের আহ্বান শোনা হয়নি। পরবর্তী পরিস্থিতিতে সেদিন দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় ছাত্রনেতারা দ্রুত সরকার গঠনের বিষয়ে একমত হন।

আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ৫ থেকে ৮ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা রাজনৈতিক নেতাদের পাশ কাটিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। তাদের সমর্থন ছাড়া একেবারে এককভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নিলে সেটার পরিণতি কেমন হবে, সেটা বোঝাও তরুণ ছাত্রনেতাদের জন্য কঠিন ছিল।

আসিফ মাহমুদ দাবি করেন, ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে তিনি প্রস্তাব করেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘মিডল গ্রাউন্ড রেখে’ সেখানে একটা আলোচনা আয়োজনের। সেটি হয়নি। তার ভাষ্যে, ‘আমাদের বলা হলো, আপনারা ক্যান্টনমেন্টে আসেন। তো আমরা বললাম যে ক্যান্টনমেন্টে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারপর আলোচনার ভেন্যু হিসেবে একটা মিডল পয়েন্টে আমাদেরকেও আসতে হলো।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদের সঞ্চালনায় এই গোলটেবিলে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, পুসাবের স্থায়ী কমিটির সদস্য ফাহমিদুর রহমান, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট মোহাম্মদ সজল বক্তব্য দেন।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর