নির্বাচনের আগেই গণভোট চায় জামায়াত; বিশেষ আদেশে সনদ বাস্তবায়নের দাবী

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ০১:১০ এএম

বিশেষ আদেশে সনদ বাস্তবায়নের দাবী

নির্বাচনের আগেই গণভোট ও বিশেষ আদেশে সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। বুধবার (২২ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের এ কথা বলেন।

বৈঠক শেষে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং-এ বলেন, "আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যেই জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছি। জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতে ইসলামীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আমরা বলেছি- এখন প্রয়োজন এটাকে আইনি ভিত্তি দিয়ে বাস্তবায়ন করা। এই সনদে নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে আগেই পাশ করিয়ে তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন না হলে- তাহলে তো আমাদের সব পরিশ্রম বৃথা ছাড়া আর কিছুই নয়।’ উনি বলেছেন, ‘আমি এটা বাস্তবায়নের যথাযথ উদ্যোগ নেব।"

তিনি বলেন, "আমরা আরও বলেছি, একটা আদেশের মাধ্যমে এটাকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে। ‘এটা কনস্টিটিউশন (সংবিধান) নয়। এটা হচ্ছে এক্সট্রা কনস্টিটিউশনাল অ্যারেঞ্জমেন্ট; যেটা কোনো সরকার এরকম একটা পরিস্থিতিতে পড়লে দেয়ার এখতিয়ার রাখে। উনি আমাদের সাথে একমত হয়েছেন যে, একটা আদেশের মাধ্যমেই এটা হবে। সকলেই এ পরামর্শ দিয়েছেন যে, একটি আদেশের মাধ্যমে এটাকে বৈধতা দিতে হবে। আর সেই আদেশের উপরই গণভোট হবে। আমরা এটা ক্লিয়ারলি বলেছি।"

জুলাই সনদের বিষয়ে অধ্যাদেশ জারির বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ তাহের বলেন, অধ্যাদেশ খুব দুর্বল। এগুলোর সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়ার মতো স্ট্রেংথ (ক্ষমতা) অধ্যাদেশে নেই। কিন্তু আদেশ ইজ ইকুইভেলেন্ট (সমান) টু সাংবিধানিক পরিবর্তন পাওয়ার (ক্ষমতা) এবং অথরিটির দিক থেকে। আমরা আমাদের এক্সপার্ট কমিটির সঙ্গে বসেছি। আমাদের এক্সপার্ট কমিটি আবার ঐকমত্য কমিশনের এক্সপার্ট কমিটির সঙ্গে বসেছে। সবাই এই পরামর্শ দিয়েছেন যে একটি আদেশের মাধ্যম এটাকে বৈধতা দিতে হবে। আর সেই আদেশের ওপরেই গণভোট হবে। আমরা এটা ক্লিয়ারলি (পরিষ্কার) বলে আসছি। উনি আমাদের কথায় রাজি হয়েছেন বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। আমরা আশা করি, তিনি সেদিকেই যাবেন।

দ্বিতীয় কথা হলো- "গণভোটের ব্যাপারে বিএনপি কোনভাবেই প্রথমত রাজী হচ্ছিল না। আমরা এটার উপর জোর দিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত বিএনপি গণভোটে রাজী হয়েছে। আমরা বিএনপিকে ধন্যবাদ জানাই। তারপরে বিএনপি একটা জটিলতা তৈরী করার চেষ্টা করছে। সেটা হলো গণভোট আর জাতীয় নির্বাচন একদিনে হতে হবে। দু’টো একেবারে আলাদা জিনিস। একটা হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে দেশে কিভাবে সরকার চালাবে সেটার সিদ্ধান্ত। আর গণভোট হচ্ছে, আমাদের কতগুলো রিফর্মস; তা হলো কিভাবে সরকার পরিচালিত হবে, কিভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা থাকবে এসব মৌলিক বিষয়। এর সাথে জাতীয় নির্বাচনের কোন রিলেশন নেই। সেজন্য আমরা বলেছি গণভোটের মাধ্যমে রিফর্মস গুলো পাশ করাতে হবে। জনগণ যদি হ্যাঁ বলে পাশ হয়ে গেলো। জনগণ যদি না বলে পাশ হবে না। আর যদি হ্যাঁ হয় এর ভিত্তিতে নির্বাচন দিতে হবে। এটা যদি না হয় এটাকে মাইনাস করে নির্বাচন হবে।"

তিনি বলেন, বাংলাদেশে দু’টি গণভোট হয়েছে, একটি হয়েছে ১৭ দিনের ব্যবধানে, আরেকটি হয়েছে ২১ দিনের ব্যবধানে। আমরা বলেছি, নভেম্বরের শেষে দিকে গণভোট করার জন্য। তারপরে আরও আড়াই মাস থাকবে জাতীয় নির্বাচনের জন্য। সুতরাং এখানে সময়ের কোন সমস্যা নেই।

তিনি আরও বলেন, তৃতীয় জটিলতা হলো নোট অব ডিসেন্ট বা পয়েন্ট অব ডিসেন্ট। আমরা ৩১টি দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, যার মধ্যে ২৯টি দল প্রায় একমত হয়েছে- সেটাই মূল সিদ্ধান্ত। এখন যদি দুইটি দল বলে যে তারা মানছে না, তাহলে সেটি সিদ্ধান্ত বাতিল নয়; বরং এটি সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত বা নোট অব ডিসেন্ট। এক-দুটি দলের অমতকে কেন্দ্র করে রেফারেন্ডাম ডাকা বা নতুন সিদ্ধান্তের দাবি করা ঠিক নয়। এসবই অপ্রয়োজনীয় জটিলতা তৈরির প্রক্রিয়া, যেটি এড়িয়ে আমরা সঠিক পথে এগিয়ে যেতে চাই।

তিনি বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং জনগণের অংশাগ্রহণমূলক নির্বাচন আমাদের জন্য জরুরি। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য নানা জটিলতা তৈরি করছে। এজন্য কোন ধরনের জটিলতা তৈরী না করে আমরা সবাই মিলে যেন ফেব্রুয়ারিত একটি আনন্দমুখর পরিবেশে নির্বাচনে যেতে পারি, সেইভাবে আচরণ করার জন্য আমি সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

আমরা আরও বলেছি- সেটি হলো আপনারা জানেন ইলেকশন কমিশনে, সচিবালয়ে, পুলিশ প্রশাসনসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রায় ৭০% থেকে ৮০% অফিসারই একটি দলের আনুগত্য করছে। আমরা বলেছি আপনারা কেয়ারটেকার সরকারের মতো আছেন, আপনারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেন, একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করেন। যেখানে যেখানে রদবদল করা দরকার সেখানে সেখানে রদবদল করেন। উনি আমাদেরকে বলেছেন, উনি নিজেই তত্ত্বাবধান করবেন এবং লটারি সিস্টেমে পোস্টিং ঠিক করবেন। এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। তবে লটারির পিছনে কোন একটা ভূত দাঁড়িয়ে না থাকে সেটা দেখতে হবে।

জামায়াতের প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।

এআরএস

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর