‘পৃথিবীর কোনো শক্তি ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না’

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:০৯ পিএম
আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১:০৭ এএম

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, পৃথিবীর কোনো শক্তি এ নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলসহ বেআইনি সমাবেশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক ঐক্য ধরে রাখারও তাগিদ দ

রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমীতে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব শফিকুল আলম এসব কথা বলেন। এ ছাড়া রাজবাড়ীর নুরাল পাগলার আস্তানার ঘটনায় ভিডিও দেখে এখন পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দুইজন পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন যে করেই হোক, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হবে। পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই এই নির্বাচনকে ঠেকাতে পারবে। নির্বাচন হবেই। সেজন্য যত ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে, প্রস্তুতিগুলো নেওয়া হচ্ছে।

গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ১০ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক ঐক্য ধরে রাখার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ তথ্য জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে ড. ইউনূস বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যাতে নিজেদের মধ্যে আরও সম্পর্ক বজায় থাকে, ভালো সম্পর্ক বজায় থাকে এবং সবাই মিলে যাতে সামনের নির্বাচনকে ঘিরে যাতে কোথাও কোন ধরনের নিরাপত্তা-জনিত ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান করেন প্রধান উপদেষ্টা। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আরও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়ে জোর দেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, গত কিছুদিনে কিছু ঘটনার ঘটেছে, তার আলোকে এই বৈঠক হয়। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে (আওয়ামী লীগের) ঝটিকা মিছিলসহ বেআইনি সমাবেশের বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। এর নেপথ্যে যারা সক্রিয় রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, বৈঠকে আলোচনায় আসে, যখনই দেখছে দেশ নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে এবং জুলাইয়ের হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত এগোচ্ছে, তখনই পতিত পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি (আওয়ামী লীগ) মরিয়া ও বেপরোয়া হয়ে পড়ছে। এর ফলে তারা দেশের সার্বিক শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে এবং গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে সব শক্তি নিয়ে মাঠে নামছে।

প্রেস সচিব বলেন, এটা এখন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নয়, এটা জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈঠকে বলা হয় দেশের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে কাউকে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না। সরকার মনে করে দেশের স্বার্থে জনগণের সঙ্গে সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ঐক্য ধরে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় বৈঠকে।

তিনি বলেন, গত বছর দুর্গাপূজার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ভালো অভিজ্ঞতা ছিল। গত বছরের অভিজ্ঞতাকে এ বছরও কাজে লাগাতে পারি এবং তিনি জোর দিয়েছেন যাতে এবার নিরাপত্তা সব ধরনের আগে থেকেই নেওয়া হয়, যাতে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য দেশের সকল ধর্মভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ধর্ম উপদেষ্টা অতি শিগগিরই বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে কথা বলবেন।

শফিকুল আলম বলেন, বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে ক্রমাগতভাবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি মনিটর করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনকে আগাম প্রস্তুতি রাখতে হবে। এর পাশাপাশি ডাকসু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে হয় সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির বিষয়ে সরকারের দুটো কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বদলিকৃতদের পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত আদেশগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাই পল্লি বিদ্যুতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মবিরতির প্রয়োজন নেই। দেশবিরোধী শক্তি পল্লি বিদ্যুতে আন্দোলনের ইন্ধন যোগাচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বিষয়ে সরকার সহনশীল। কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহ বা গ্রাহক সেবা ব্যাহত হলে সরকার কঠিন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।

সম্প্রতি রাজবাড়ীর ঘটনার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, এ পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সাতজনের মধ্যে অন্তত দুজন স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, যারাই এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, যাদের সংশ্লিষ্টতা তদন্তে আসবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর