প্রধান উপদেষ্টাকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান রাজনৈতিক দলের নেতাদের

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ও ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করতে আরো নিয়মিতভাবে সর্বদলীয় সভা আয়োজন করুন। বুধবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এ আহ্বান জানান ১৩টি রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বৈঠক শেষে এ তথ্য জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বলেছে, আজকের বৈঠকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও গণঐক্য অটুট রাখার বিষয়ে অংশগ্রহণকারী সকল দল সমর্থন জানান। তারা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টাকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান। নেতারা সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে ও ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করতে আরো নিয়মিত ভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সর্বদলীয় সভা আয়োজনের অনুরোধ জানান।
বৈঠক শেষে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, গণঅভ্যুত্থানের অংশীদারদের অনৈক্যের পিছনে সুনির্দিষ্টভাবে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর বিভেদের কারণেই ফ্যাসিবাদ বারবার সুযোগ নিচ্ছে। সংস্কার ও সঠিক সময়ে নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে সংশয়ের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। তাকে বলেছি— আপনি যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে না পারেন আবার ভালো নির্বাচনও নিশ্চিত করা সম্ভব না মনেকরেন তাহলে পদত্যাগ করে চলে আসুন। সংস্কার ও নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আগ্রহী সকল পক্ষ মিলে আপনার নেতৃত্বে আমরা একটা নির্বাচনী অ্যালায়েন্স করি।
তিনি বলেন, শুধু বিপদে পড়লেই প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকেন। আমরা ফ্যাসিবাদের পতনের পরে ২ ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছি এবং এটি রোধ করতে সরকার কার্যকর ভূমিকা নেয় নাই, এর প্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঘনঘন বসবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতি সরকার পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে মন্তব্য করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এনসিপির প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। সব রাজনৈতিক দল সরকারের পক্ষপাতমূলক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ করেছে। এনসিপির প্রতি এমন আচরণ বজায় থাকলে সরকারের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। পতিত আওয়ামী লীগ যেকোনো ইস্যুতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে অরাজকতা করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বিচার সংস্কার ও নির্বাচনের দায়িত্ব সরকারের ওপর। অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা দরকার। তাহলে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরবে। নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বানাতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমান আচরণ করতে হবে। সঠিক সময়ে নির্বাচন ও সংস্কার নিয়েও ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। এজন্য বাড়ছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। এসব দূর করতে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মতপার্থক্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরো দৃশ্যমান করা দরকার। তা না হলে তারা এটাকে সুযোগ মনে করছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরে আমাদের আয়োজন ছিল সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে অতীতকে স্মরণ করা, সেজন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। এতে করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে ঐক্যটা দৃশ্যমান হতো। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
বৈঠকে অংশ নেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির মজিবুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির তানিয়া রব, ১২–দলীয় জোটের শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণফোরামের মিজানুর রহমান।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে চারটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। দলগুলো হলো- বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলগুলোর নেতারা সরকারের পাশে থাকার পাশাপাশি ফ্যাসীবাদবিরোধী অবস্থানে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা জানান।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: