আদালতে জবানবন্দি

ওসমান হাদি হত্যা: আসামিদের পালাতে ও অস্ত্র লুকাতে সাহায্য করেন ফয়সালের বাবা-মা

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:১২ পিএম
আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:৪৬ পিএম

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের বাবা মো. হুমায়ুন কবির (৭০) ও মা মোসা. হাসি বেগম (৬০) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারকের খাসকামরায় ১৬৪ ধারায় তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের বাবা-মা আদালতকে বলেছেন, আসামিদের পালাতে ও অস্ত্র লুকাতে তারা সাহায্য করেছেন। এরপর জবানবন্দী শেষে তাদের কারাগারে পাঠিনোর আদেশ দেন আদালত।

এর আগে বিকেলে শুটার ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির (৭০) এবং মা মোছা. হাসি বেগমকে (৬০) আদলতে হাজির করে পুলিশ। পরে বিচারকের খাসকামরায় নেয়া হয় তাদের। গত মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ হাউজিং এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ফয়সালের মা-বাবাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১০। পরে তাদের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

র‌্যাবের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, তাদের চার সন্তানের মধ্যে আসামি শুটার ফয়সাল তৃতীয়। আসামি শুটার ফয়সাল রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় তার বোন জেসমিন আক্তারের সপ্তম তলার বাসায় প্রায়ই যাতায়াত করত। ঘটনার দিন রাতে আসামি শুটার ফয়সাল জেসমিন আক্তারের বাসায় একটি ব্যাগ নিয়ে ওঠেন। পরে ওই বাসার চিপা দিয়ে কালো ব্যাগটি ফেলে দেন এবং আবার আসামি তার ভাগনে জামিলকে (১৮) দিয়ে ব্যাগটি নিয়ে আসেন। আসামি তার নিজ ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোনের একটি ওই বাসার ছাদ থেকে ফেলে দেন এবং অন্যটি তার মা হাসি বেগমকে দেন।

পরে সেখানে বাবা-মার সঙ্গে দেখা করে। সেখানে আসামি শুটার ফয়সাল তার অবস্থান নিরাপদজনক মনে না হওয়ায় আগারগাঁও থেকে মিরপুর, পরে শাহজাদপুরে আসামি মো. হুমায়ুন কবিরের ভাতিজা আরিফের বাসায় যান। শুটার ফয়সালের ব্যাগ নিয়ে তার বাবা মো. হুমায়ুন কবির একটি সিএনজি ভাড়া করে দেন এবং সঙ্গে কিছু টাকাও প্রদান করেন। পরবর্তীতে আসামিরা তার ছোট ছেলে হাসান মাহমুদ বাবলু ওরফে রাজের কেরাণীগঞ্জের বাসায় আসে এবং তারা জুরাইন থেকে দুটি মোবাইল সিম কিনে ব্যবহার করে।

গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে বিজয়নগর এলাকায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি একটি রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল করে আসা দুজনের একজন তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিতে হাদি মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালানোর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুজনকে শনাক্ত করে। তারা হলেন- ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান (প্রধান সন্দেহভাজন শুটার) এবং আলমগীর হোসেন (বাইক চালক)। এ ঘটনায় ফয়সাল করিমের স্ত্রী, প্রেমিকা ও শ্যালককে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

এদিকে, হাদিকে গুলি করার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির মালিকানা নিয়ে আদালতে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন মূল অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবির। মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামানের আদালত কবিরের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

একইদিন মূল অভিযুক্ত ফয়সালকে পালিয়ে যেতে গাড়ি দিয়ে সহায়তা করা মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বলের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর