জানুয়ারি ঘিরে ইচ্ছেমতো বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর তোড়জোড়, নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের তাগিদ
সাড়ে ৩ কোটি মানুষের মেগাসিটি ঢাকা; যেখানে ৭৫ ভাগের বসবাস ভাড়া বাসায়। প্রতি বছর নিয়ম করে আয় না বাড়লেও এই শহরে পাল্লা দিয়ে বাড়ে বাড়ি ভাড়া, যা নিয়ে জবাবদিহিতার লেশমাত্র থাকে না মালিকদের। শুধু নীরবেই মাশুল গুনে যায় ভাড়াটিয়ারা।
কয়েকজন ভাড়াটিয়া জানান, সাধারাণ মানুষের আয় বিবেচনা করা উচিত বাড়ির মালিকদের। আমাদের তো স্যালারি বাড়তেছে না। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। বাড়িওয়ালারা সোজা জানিয়ে দেন, বাড়ি ভাড়া এত টাকা বাড়বে। থাকলে থাকেন, না থাকলে চলে যান।
উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা আব্দুল মালেক জনি। ৭ বছর আগে সাড়ে ৭০০ বর্গফুটের যে ফ্ল্যাটে ভাড়া দিতেন ১৭ হাজার টাকা, তা এখন ২৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, দিন দিন মানুষের চাপ বাড়ছে, চাহিদা খুব বেশি। আমি চলে গেলেও বাড়িওয়ালার অসুবিধা নেই। তিনি আরও বেশি টাকায় ভাড়া দিতে পারবেন।
রাজধানীর উত্তরা, মিরপুর, ধানমন্ডি ও হাতিরঝিল এলাকায় সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ১০ বছরে বাসা ভাড়া বেড়েছে দিগুণ। সাধারণ মানুষ বলছে, বাড়ির মালিকরা যদি আইন মানত, তাহলে এভাবে ভাড়া বাড়াতে পারত না। আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। প্রতিটি এলাকার সরকার কর্তৃক একটা নির্দিষ্ট ভাড়া নির্ধারিত থাকা জরুরি।
এ ছাড়া, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য বলছে, ২৫ বছরে ঢাকায় বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ৪০০ শতাংশ। ক্যাবের ভাষ্য, বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে যে চুক্তি, সেটি অলিখিত। সে জন্য ভাড়াটিয়ারা এটির ব্যাপারে কোনো প্রতিকার নিতে পারে না। ১৯৯১ সালের যে ভাড়াটিয়া নিরাপত্তা আইন আছে, এটিতে আপডেট করা দরকার এবং বাস্তবায়ন করা দরকার।
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ অনুযায়ী, দুই বছর অন্তর ভাড়া বাড়ানো যেতে পারে যৌক্তিক কারণে। কিন্তু, এর তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো বাড়ানো হয় ভাড়া। এই সংকট সমাধানে সম্প্রতি বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যেহেতু নির্দেশিকা সিটি করপোরেশন থেকে আসবে। কেউ যদি ছয় মাস বা এক বছর পর ভাড়া বাড়াতে চায়, তখন তো তাকে কোথাও না কোথাও যেতে হবে—ওই ম্যাকানিজম তৈরি করছি। তৈরি করে আমরা আগাব। যাতে এক ধরনের ন্যায্যতা তৈরি হয়।
বাসা ভাড়ার ইস্যু গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। বাড়ি ভাড়া নির্ধারণে কেনো নীতিমালা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গেল ২ ডিসেম্বর রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: