পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি চলছে
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ বাতিল করে হাইকোর্ট যে ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেছিলেন, তার বিরুদ্ধে করা তিনটি পৃথক আপিল আবেদনের ওপর দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়।
এর আগে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) একই বেঞ্চে প্রথম দিনের শুনানি হয়। আদালত সেদিনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার শুনানি চালিয়ে যাওয়ার জন্য দিন ধার্য করেন।
এদিন সুজন সম্পাদকসহ চার ব্যক্তির পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কারিশমা জাহান ও বিদুয়ানুল করিম। শুনানিতে ড. ভূঁইয়া হাইকোর্টের দেয়া রায়, সংশোধনীর বিতর্কিত ধারাসমূহ এবং এসব ধারা বাতিলের পক্ষে হাইকোর্ট যে যুক্তি দেখিয়েছেন সেগুলো আদালতের সামনে উপস্থাপন করেন।
তিনি তুলে ধরেন, পঞ্চদশ সংশোধনীতে যুক্ত কিছু ধারা-বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসংক্রান্ত ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল কি না। পাশাপাশি উল্লেখ করেন সংশোধনীতে যুক্ত ৭(ক), ৭(খ), ৪৪(২) অনুচ্ছেদ নিয়ে হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের প্রভাব।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর পৃথক দুটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কয়েকটি ধারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন। রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের জন্য করা ২০ ও ২১ ধারা, সংবিধানে যুক্ত ৭(ক), ৭(খ) এবং ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় বাতিল করা হয়।
রায়ে আরও বলা হয়, দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিলোপ হওয়া ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। তবে পুরো পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়নি; বাকি পরিবর্তনগুলোর বিষয়ে ভবিষ্যৎ সংসদ আইন অনুসারে সিদ্ধান্ত নেবে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হয়।
হাইকোর্টের রায় কার্যকর হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের সম্ভাবনা তৈরি হলেও একই সঙ্গে সাংবিধানিক কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে এই যুক্তিতে তিন পক্ষ লিভ টু আপিল করেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, নওগাঁর বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ এই তিনটি লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। এরপর এগুলো নিয়মিত আপিলে রূপ পায় এবং বুধবার (৩ ডিসেম্বর) থেকে শুনানি শুরু হয়।
এ গুরুত্বপূর্ণ আপিলে অতিরিক্ত পক্ষ (ইন্টারভেনার) হিসেবে যুক্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণফোরামের নেতা সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস, ‘সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি’ নামের একটি সংগঠন।
২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হওয়া পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। সংশোধনীতে মোট ৫৪টি বিষয় পরিবর্তনের আওতায় আসে।
এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলো হলো- তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, জাতীয় সংসদে নারীদের সংরক্ষিত আসন ৪৫ থেকে ৫০ করা, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল, রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজন,অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ ঘোষণা এবং সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান সংযোজন, নির্বাচন পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিধান যুক্ত করা।পরদিন ২০১১ সালের ৩ জুলাই রাষ্ট্রপতি এই সংশোধনীতে অনুমোদন দেন।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: