কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হওয়ায় জনগণ ভোটাধিকার ফিরে পাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:১১ পিএম

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে রায় ঘোষণা করেছেন সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগ। এর মধ্য দিয়ে চৌদ্দ বছর আগে আদালতের রায়ে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবারো ফিরে এলো।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আজ ২০ নভেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এক যুগান্তকারী ও ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হওয়ায় রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “এ রায়ের মাধ্যমে দেশের জনগণের বহুল প্রতীক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে এবং তারা ভোটাধিকার ফিরে পাবে। এই রায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।” দীর্ঘ শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টের এই রায় সকলের মনে সন্তুষ্টি ও স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
 
আজ দুপুর ২টায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় অফিস সেক্রেটারি মাওলানা আফম আব্দুস সাত্তার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জনাব আব্দুল মান্নান এবং প্রচার সহকারী আব্দুস সাত্তার সুমন।
 
এড. জুবায়ের মামলাটির সঙ্গে জড়িত সব আইনজীবী, পক্ষভুক্ত ব্যক্তিবর্গ এবং আদালতকে সহযোগিতা প্রদানকারী সবাইকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, “তাদের ভূমিকা জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।” তিনি অভিযোগ করেন যে, শেখ হাসিনা ২০১১ সালে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেশকে এক অন্ধকার যুগে ঠেলে দিয়েছিলেন। আজকের রায়ের মাধ্যমে জাতি সেই অন্ধকার থেকে পুনরায় মুক্তি লাভ করেছে।
 
জামায়াতের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালের ২০ নভেম্বর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব আব্বাস আলী খান প্রথম কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি উত্থাপন করেন। বাস্তবে এই পদ্ধতির ধারণা উপস্থাপন করেন জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম। পরবর্তীতে এই দাবিই পরিণত হয় গণদাবিতে। ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর সকল দলের সম্মতিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান করা হয়। তার নেতৃত্বে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন ছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ-যা দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়। এরপর দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৯৬ সালে সংবিধানে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা যুক্ত হয় এবং কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থার অধীনে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়।
 
তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন ছিল বিতর্কিত। কেয়ারটেকার ব্যবস্থা বাতিল করার পর ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি ঘোষণা করা হয়, যা ছিল সরাসরি ভোটবিহীন নির্বাচন। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের মাধ্যমেই ওই নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। একইভাবে ২০১৮ সালে আগের দিন রাতে ব্যালটে সিল মেরে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনও ছিল “আমি, তুমি ও ডামি” নামে পরিচিত এক ভুয়া ভোটগ্রহণের নাটক-যা বিরোধীদলগুলো বর্জন করে।
 
এড. জুবায়ের বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্রসমাজ ও সাধারণ মানুষ শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে তোলে এবং ৫ আগস্ট সেই সরকারের পতন ঘটে। জুলাই বিপ্লবের পর কেয়ারটেকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। আজকের রায়ের মাধ্যমে সেই দাবি বাস্তবায়িত হলো। রায় অনুযায়ী ১৪তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে, ফলে জনগণ ফিরে পাবে তাদের ভোটাধিকার। এতে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নতুন স্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে এবং দেশ উন্নতি ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে-এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
 
শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। 

LIMON

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর