শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল
গত বছরের জুলাই-আগস্টে আন্দোলন দমনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩ আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা আগামীকাল সোমবার। এ রায়ের জন্য সারাদেশের মানুষ; বিশেষ করে ওই আন্দোলনে হতাহত পরিবারের সদস্যরা অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন।
এদিকে শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে রোববার দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতা, আইনজীবী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তারা গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবি করেছেন।
গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। ফলে আগামীকাল সোমবার সকাল থেকেই সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে মাঠে সরব থাকবেন শিক্ষার্থীরা।
এরই মধ্যে রোববার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। দোহারে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার আয়োজনে ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফাঁসির দাবিতে লাঠি মিছিল হয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর হাইকোর্ট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
রোববার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সামনে জড়ো হন দলের আইনজীবীরা। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে দিয়ে আবার সমিতি ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় তারা শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবি জানান।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অগ্নিসন্ত্রাসের প্রতিবাদ, হাসিনার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন গৌরীপুরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
রোববার দুপুরে পৌর সদরের কালিখলা প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে বলা হয়, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। ফলে তার ফাঁসি হওয়া উচিত। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাসিনার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের খবর পাওয়া গেছে।
গত বছরের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গড়ে উঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সরকারের দমন-নিপীড়ন ও নির্বিচিারে হত্যায় তা অবশেষে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে তার দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে তাজা গুলি ব্যবহার। ১,৪০০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে অনেকেই ছাত্র বা তরুণ বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারী, সাংবাদিক এবং চিকিৎসা কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগে অভিযুক্ত। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে প্রতিবাদে তিন-চতুর্থাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে আগ্নেয়াস্ত্রের কারণে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশকে ‘যদ্ধের উদ্দেশ্যে তৈরি’ অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছে।
বিক্ষোভ চলাকালীন হাজার হাজার ব্যক্তিকে কোনও অভিযোগ ছাড়াই আটক করা হয়েছিল। নির্বিচারে আটকের অসংখ্য ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়। যেখানে ব্যক্তিদের হেফাজতে মারধর, নির্যাতন এবং দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু আটক ব্যক্তিকে স্বীকারোক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছিল অথবা তাদের আইনি প্রতিনিধিত্বের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। অনেক আটক ব্যক্তিকে দীর্ঘ সময় ধরে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বিক্ষোভের সময় সহিংসতার লিঙ্গভিত্তিক প্রকৃতি তুলে ধরা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত গোষ্ঠীগুলির দ্বারা নারীরা ধর্ষণ ও হয়রানি সহ যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
সাংবাদিক, মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং কর্মীরাও রাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। বিক্ষোভ কভার করার সময় ৫০ জনেরও বেশি সাংবাদিক আহত বা আটক হন এবং অনেককে হয়রানির শিকার হন এবং বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সরকারি সেন্সরশিপ বা বন্ধের সম্মুখীন হয়।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: