পাসপোর্ট ফেরতের আবেদন নামঞ্জুর, অঝোরে কাঁদলেন মেঘনা আলম

রাজধানীর ধানমণ্ডি থানার প্রতারণা ও চাঁদা দাবির মামলায় আলোচিত মডেল মেঘনা আলমের জব্দ করা পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে করা আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালত রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এদিকে শুনানি শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ব্রিফিং করার সময় অঝোরে কান্নাকাটি করেন মেঘনা আলম।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ জুলাই পাসপোর্ট, মোবাইল ও ল্যাপটপ ফেরত চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আবেদন করেন মেঘনা আলম। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন আদালত মেঘনা আলমের মোবাইল ও ল্যাপটপে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো উপাদান আছে কি-না, তা তদন্তের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এসব ডিভাইসের মালিকানা যাচাই করে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
আজ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য তারিখ থাকলেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তা দাখিল করতে পারেননি। এদিন মামলার শুনানিকালে আদালতে হাজির হন মেঘনা আলম। এ সময় মেঘনার আইনজীবী মহসিন রেজা পলাশ ও মহিমা বাঁধন তার পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে শুনানি করেন। তারা আদালতকে বলেন মেঘনা আলম একজন লিডারশিপ ট্রেইনার। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য প্রায়ই তাকে দেশের বাইরে যেতে হয়। সামনে বিদেশে দুই দিনের একটি প্রোগ্রাম আছে। রিটার্ন টিকিটসহ যাবতীয় ডকুমেন্টস আদালতে দাখিল করা হবে।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হারুন অর রশিদ তার বিরোধিতা করে বলেন, এটা অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর মামলা। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন। এছাড়া তার মোবাইল ও ল্যাপটপে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো উপাদান আছে কি-না সে বিষয়ে ফরেনসিক রিপোর্ট দাখিলের বিষয়ে আদালতের আদেশ আছে। ল্যাপটপ, মোবাইল ব্যবহার করে কোন কোন ব্যবসায়ী, কূটনীতিককে ব্ল্যাকমেইল করতেন, তা জানা প্রয়োজন। পাসপোর্ট ফেরত পেলে তিনি বিদেশে পালিয়ে যাবেন। তদন্তের স্বার্থে এই আবেদন নামঞ্জুরের প্রার্থনা করছি। পরে আদালত আসামির পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে আবেদন নামঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে ফরেনসিক রিপোর্ট দাখিলের বিষয়ে আগামী ১১ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
শুনানি শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে মেঘনা আলম বলেন, তারা একটার পর একটা মিথ্যা বলে যাচ্ছে শুরু থেকেই। সারা বাংলাদেশে তারা আমাকে অপমান করে ছোট করে দিয়েছে মানুষের সামনে। এ সময় কান্না করতে করতে তিনি বলেন, আমি কীভাবে ন্যায় বিচার পাবো? তারা আদালতে একটা পর একটা মিথ্যা বলতে থাকে। আদালত তো ন্যায়বিচার দেয় মানুষকে, সেখানে যদি একটার পর একটা মিথ্যা বলতেই থাকে তাহলে কীভাবে ন্যায় বিচার হবে। এরপর আর কিছু না বলে কান্না করতে থাকেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবী মহিমা বাঁধন বলেন, আমরা আদালতে মেঘনা আলমের জব্দ করা পাসপোর্ট, মোবাইল ও ল্যাপটপ ফেরত চেয়ে আবেদন করি। আজকে এ মামলায় মেঘনা আলমের জব্দ করা মোবাইল ও ল্যাপটপের ফরেনসিক রিপোর্ট দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। তিনি আদালতকে জানিয়েছেন ডিভাইসের ফরেনসিক রিপোর্ট প্রস্তুত হয়নি। আমরা আদালতকে জানিয়েছি মেঘনার বিদেশে একটি প্রোগ্রাম রয়েছে। পাসপোর্টের তো ফরেনসিক রিপোর্ট করার কিছু নেই, সেক্ষেত্রে পাসপোর্টটা ফেরত চেয়ে আমরা শুনানি করি।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হারুন অর রশিদ বলেন, মেঘনা আলমের পক্ষে তার আইনজীবীরা পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে আবেদনের বিরোধিতা করি। আমরা আদালতকে জানাই পাসপোর্ট ফেরত পেলে তার বিদেশে পালিয়ে যাওয়া সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ফরেনসিক রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে আসামি মেঘনা আলমের পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে করা আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এর আগে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মিস আর্থ বাংলাদেশ-২০২০ বিজয়ী মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত ১০ এপ্রিল ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তার ৩০ দিনের আটকাদেশ বাতিল করা হয়। গত ১৭ এপ্রিল ধানমন্ডি থানার এই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে গত ২৮ এপ্রিল আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। পরদিন ২৯ এপ্রিল তিনি কারামুক্ত হন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, মেঘনা আলম, দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বিভিন্ন সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রের কূটনীতিক/প্রতিনিধি ও দেশীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করেন। পরে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধ পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে তাদের সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে আসছে। দেওয়ান সমির KAWAII Group নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং সানজানা ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ম্যানপাওয়ার প্রতিষ্ঠানের ফার্মের মালিক মর্মে জানা যায়।
এছাড়া ইতঃপূর্বে মিরআই ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। বিভিন্ন আকর্ষণীয়, স্মার্ট মেয়েদের তার প্রতিষ্ঠানে ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিদেশি কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছে সহজে যাতায়াত নিশ্চিত করতো। দেওয়ান সমির তার ম্যানপাওয়ার ও অন্যান্য ব্যবসাকে অধিকতর লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে অসৎ উদ্দেশ্যে তার সহযোগী আসামিদের সহায়তায় বিভিন্ন কূটনীতিককে টার্গেট করতেন। এরপর তিনি ব্ল্যাকমেইল করে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা হিসেবে আদায় করতেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: