অবৈধ সম্পদ অর্জন ও টাকা পাচার, জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

জুলাই আন্দোলনে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক জানায়, ২০০০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ে সজীব ওয়াজেদ জয় ৫৪ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার ৯৭৮ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯১ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৬১ কোটি ১৮ লাখ ৫ হাজার ৮৬৯ টাকার সম্পদ অর্জন করেন। ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের পরিমাণও একই। তার গ্রহণযোগ্য বৈধ আয় ছিল মাত্র ১ কোটি ৩২ লাখ ৮ হাজার ৫৪২ টাকা। ফলে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০ কোটি ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭০ টাকা।
বৃহস্পতিবার বেলা ৩ টার দিকে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান, সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
তিনি জানান, তিনি দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অসৎ উদ্দেশে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে উক্ত সম্পদ অর্জন করেন। এছাড়া হুন্ডি ও অন্যান্য মাধ্যমে ৫৪ কোটি ৪ লাখ ৩২ হাজার ২৫৮ টাকা বিদেশে পাচার করে যুক্তরাষ্ট্রে দুটি বাড়ি ক্রয় বা বিনিয়োগ করেন। এছাড়া জয়ের নামে থাকা দুটি ব্যাংক হিসাবে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ২২ হাজার ৫৭ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনসহ মোট ৫৭ কোটি ৫০ লাখ ৫৪ হাজার ৩১৫ টাকার লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ সকল কার্যক্রম দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়ায় এ বিষয়ে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ায় আয়কর আইন মতে তার দেশবিদেশে অর্জিত ও অবস্থিত সম্পদের ঘোষণা আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। তা সত্ত্বেও তিনি তার আয়কর নথিতে প্রদর্শন না করে দেশ থেকে বিদেশে অসাধু উপায়ে পাচার করে এবং নিজ নামের ২টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৫৭ কোটি ৫০ লাখ ৫৪ হাজার ৩১৫ টাকা সন্দেহজনক লেনদেন করেন।
উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের চার সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও দলের নামে থাকা ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত। অনিয়মের মাধ্যমে নতুন শহর পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ নেওয়ায় অভিযোগে জয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এ মামলায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
এজাহার সূত্রে আরও জানা গেছে, জয়ের এফডিআর আসবাবপত্র, এবং হাতে নগদ ও ব্যাংক স্থিতি ইত্যাদিসহ মোট ৬,৭৮,৮৪,৮৯১ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। সজিব আহমেদ ওয়াজেদ এর স্থাবর ও অস্থাবরসহ সর্বমোট সম্পদের পরিমাণ (৫৪,৩৯,২০,৯৭৮ + ৬,৭৮,৮৪,৮৯১)= ৬৯,১৮,০৫,৮৬৯ টাকা। অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র ও তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, তার সর্বমোট ব্যয়ের পরিমাণ ২৮,৭৬,৬৪৩ টাকা। ব্যয়সহ তার সর্বমোট সম্পদের পরিমাণ (৬১,১৮,০৫,৮৬৯+ ২৮,৭৬,৬৪৩) ৬১,১৮,০৫,৮৬৯ টাকা। ওই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে সজিব আহমেদ ওয়াজেদ কর্তৃক গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ১,৩২,০৮,৫৪২ টাকা। অর্থাৎ, সজিব আহমেদ ওয়াজেদ সর্বমোট (৬১,১৮,০৫,৮৬৯-১,৩২,০৮,৫৪২)= ৬০,১৪,৭৩,৯৭০ টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অসৎ উদ্দেশ্যে অসাধু উপায়ে অর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে সঙ্গতিবিহীন ৬০,১৪,৭৩,৯৭০ টাকার সম্পদ অর্জন করেন। হুন্ডি বা অন্য মাধ্যমে অর্থ পাচার করে আমেরিকাতে দুইটি বাড়ী ৫৪,০৪,৩২,২৫৮ টাকায় ক্রয় ও বিনিয়োগ করেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: