লেবাননে হিজবুল্লাহর ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, ৬ সেনা নিহত

লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের কাছে একটি অস্ত্রাগারে বিস্ফোরণে লেবাননের ছয় সেনা নিহত হয়েছে। সামরিক সূত্র বলছে, সেনারা ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর একটি স্থাপনা থেকে গোলাবারুদ অপসারণের সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধের অবসান ঘটানো যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, দক্ষিণ লেবাননে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং সেখানকার হিজবুল্লাহ অবকাঠামো অপসারণের কাজ চলছে।
এই হতাহতের ঘটনা এমন সময় ঘটল, যখন লেবানন সরকার হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার সংবেদনশীল ইস্যুটি নিয়ে কাজ করছে। এই সপ্তাহে মন্ত্রিসভা সেনাবাহিনীকে চলতি বছরের মধ্যে নিরস্ত্রীকরণের পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়েছে, তবে এ নিয়ে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীটির আপত্তি রয়েছে।
শনিবার (৯ আগস্ট) ইরান জানিয়েছে, তারা লেবানন সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে।
এদিকে সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, টাইর জেলার ওয়াদি জিবকিন এলাকায় সীমান্তের কাছে একটি অস্ত্রাগার পরিদর্শন ও ভেতরের সরঞ্জাম অপসারণের সময় বিস্ফোরণে ছয় সেনা নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
একজন সামরিক সূত্র এএফপিকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণটি হিজবুল্লাহর সামরিক স্থাপনার ভেতরে ঘটে। সেনারা ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর সাম্প্রতিক যুদ্ধের পর অবশিষ্ট গোলাবারুদ ও অবিস্ফোরিত অস্ত্র সরিয়ে ফেলছিলেন।
লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন সেনাপ্রধান রডলফ হাইকালের কাছ থেকে এই “বেদনাদায়ক ঘটনার” খবর পান। প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ নিহত সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, সেনাবাহিনী দেশের ঐক্য ও বৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোর রক্ষক।
নিরস্ত্রীকরণের প্রচেষ্টা
বিস্ফোরণের কয়েকদিন আগে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর মুখপাত্র আন্দ্রেয়া তেনেন্তি জানিয়েছিলেন, সেনারা একই এলাকায় একটি বিশাল সুরক্ষিত সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক আবিষ্কার করেছেন।
গত নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি অনুযায়ী, লেবাননে অস্ত্র কেবল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের হাতেই সীমাবদ্ধ থাকার কথা। সরকার সেনাবাহিনীকে আগস্টের শেষ নাগাদ অস্ত্র কেবল সরকারি বাহিনীর হাতে সীমাবদ্ধ রাখার পরিকল্পনা পেশের নির্দেশ দিয়েছে। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহে মন্ত্রিসভা দুই দফা বৈঠক করেছে, তবে হিজবুল্লাহ এই সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
শনিবার আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেয়ির একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা বলেন, “হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণের আমরা নিশ্চিতভাবে বিরোধিতা করি... ইরান সবসময় লেবাননের জনগণ ও প্রতিরোধকে সমর্থন করেছে এবং করবে।”
গত বৃহস্পতিবার লেবাননের মন্ত্রিসভা যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে, যেখানে হিজবুল্লাহ নিরস্ত্রীকরণের একটি সময়সূচি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ওয়াশিংটন বৈরুতকে পদক্ষেপ নিতে চাপ দিচ্ছে।
সরকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটি মূল কাঠামোতে অনুমোদন করলেও নির্দিষ্ট সময়সীমা নিয়ে আলোচনা করেনি। পাশাপাশি তারা সীমান্ত এলাকায় লেবাননের সেনা মোতায়েনের এবং সাম্প্রতিক যুদ্ধে ইসরায়েল যে দক্ষিণ লেবাননের পাঁচটি এলাকা দখল করেছে, সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।
এর আগে, এপ্রিলে দক্ষিণে গোলাবারুদ বিস্ফোরণে তিন সেনা নিহত হয়েছিলেন। এর কয়েকদিন আগে আরেকটি বিস্ফোরণে এক সেনা নিহত ও তিনজন আহত হয়েছিল, তখন কর্তৃপক্ষ একটি সুড়ঙ্গ থেকে মাইন অপসারণ করছিল।
সূত্র : আল আরাবিয়া
এআরএস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: