ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৬.৮২ শতাংশ
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আরো কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে দাঁড়ায়, যা ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তথ্য রয়েছে।
ওই তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রবৃদ্ধি ২০০৪ সালের পর থেকে এত নিচে নামেনি।
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, টানা সাত মাস ধরে ঋণ প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ায় দেশের ব্যাংকিং এবং ব্যবসায়িক খাতে এই পতন গভীর সংকটের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে পারস্পরিক শুল্কারোপ করেছে, তা সংকটকে আরো গভীর করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ, নভেম্বরে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ, অক্টোবরে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ২ শতাংশ, আগস্টে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ, জুলাইয়ে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং ২০২৪ সালের জুনে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ ছিল।
২০২২ সালের নভেম্বরে নিম্নমুখী প্রবণতা শুরু হয়েছিল কিন্তু গত ৫ বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঘোষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মুদ্রানীতিতে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৯ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছে। তবে প্রকৃত প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার অনেক নিচে রয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এমন অনেক কারণের সংমিশ্রণে বেসরকারি খাতের ঋণ হ্রাস পাচ্ছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত ঋণের চাহিদা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা কম। কারণ, পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের আগে ব্যবসায়ীরা সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
তিনি আরো বলেন, বেশ কয়েকটি ব্যাংক বিশেষ করে যাদের বোর্ড সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা পুনর্গঠিত হয়েছে তাদের বড় ঋণ প্রদানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যা ঋণ সরবরাহকে আরো সীমাবদ্ধ করে তুলেছে। মার্কিন শুল্কারোপও পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করবে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আর্থিক বাজারে ঋণের চাহিদা দুর্বল রয়ে গেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে ব্যবসায়িক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলোকে আরো প্রভাবিত করতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর সাম্প্রতিক মার্কিন শুল্ক ব্যবসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে ব্যাংকিং খাতে ঋণের চাহিদা হ্রাস পাবে।
তথ্যানুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি শেষে বেসরকারি খাতের ঋণ স্থিতি দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা, আগের বছরের একই মাস শেষে যা ছিল ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: