তেল পরিবহনে নতুন যুগে বাংলাদেশ, উদ্বোধন শনিবার
আপডেট: ১৫ আগষ্ট ২০২৫ ৯:৫৭ এএম

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনে ঢাকায় জ্বালানি তেল আসবে। আগামী শনিবার (১৬ আগস্ট) পতেঙ্গার ডেসপাস টার্মিনাল থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত তেল পরিবহন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের প্রকল্প নেন তৎক্ষালীন সরকার। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে প্রকল্পের কাজ। এবং তেল পরিবহনের পরীক্ষামূলক অপারেশনও সফল হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিবহন ব্যয় ও তেল অপচয় ঠেকানোসহ বছরে প্রায় ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
উদ্বোধনের পর নদীপথে অয়েল ট্যাংকারের পরিবর্তে পাইপলাইনে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা ডিপোতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা বলেন, এসব তেল পরিবহনে শতাধিক কোস্টাল ট্যাংকারে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন ১২ ঘণ্টায় জ্বালানি তেল নারায়ণগঞ্জের ডিপোতে পৌঁছাবে। তা ছাড়া খারাপ আবহাওয়ার কারণে নৌপথে ট্যাংকারে তেল পরিবহন বিঘ্নিত হতো এবং ঝুঁকির সৃষ্টি হতো। এই পাইপলাইন সে সমস্যার সমাধান করে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
পরিবেশবান্ধব, ঝুঁকিমুক্ত, পরিবহন ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ২৪২ কিলোমিটার পাইপলাইনে চট্টগ্রাম থেকে প্রতি ঘণ্টায় ২৬০-২৮০ টন ডিজেল যাবে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোতে।
বিপিসির এক কর্মকর্তা জানান, গত ২২ জুন পতেঙ্গা গুপ্তখাল থেকে পদ্মা অয়েল কোম্পানির দুই ট্যাংকের ১৮-২০ হাজার টন ডিজেল পাইপলাইনে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোতে পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছিল। এরপর মেঘনা অয়েল কোম্পানির দুটি ট্যাংকের ১৬-১৮ হাজার টন ডিজেল পাঠানোর কাজ শুরু হয়।
সবকিছু স্বয়ংক্রিয় স্ক্রিনে মনিটরিং করা হয়েছে, পাইপলাইনে তেল পাঠাতে কোনো জটিলতা হয়নি। এ লাইনে ঘণ্টায় ৩২০ টন জ্বালানি পাঠানোর সক্ষমতা থাকলেও প্রাথমিক পর্যায়ে ঘণ্টায় ২৬০-২৮০ টন পাঠানো হয়েছে। পদ্মা, মেঘনার পর পাইপলাইনে তেল যায় যমুনার। পাইপলাইনে তেল গেছে কুমিল্লার ডিপোতেও। এর মধ্য দিয়ে অপারেশনাল সক্ষমতা, অভিজ্ঞতা ও প্রকল্প হস্তান্তর প্রক্রিয়ার প্রাথমিক কার্যক্রম চলছিল।
পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি পিএলসি (পিটিসিপিএলসি) ও প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা এই জ্বালানি সরবরাহের বিষয়টি তদারকি করছেন বলে জানান বিপিসির এ কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, বছরে ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেল সরবরাহের সক্ষমতাসহ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত, সিস্টেম লস কমানো, নৌপথে তেল পরিবহনের বিপুল খরচ সাশ্রয়, পরিবেশ সুরক্ষা, ঝুঁকিমুক্তভাবে দ্রুততম সময়ে তেল পরিবহনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত আড়াই’শ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করা পাইপলাইন প্রকল্পে বছরে আয় হবে ৩২৬ কোটি টাকা। পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন খাতে খরচ হবে ৯০ কোটি টাকা। এ বছরই প্রকল্পটি শেষ হচ্ছে।
প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত আড়াই শ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গুপ্তখাল থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ২৪১ দশমিক ২৮ কিলোমিটার পাইপলাইন। ভূগর্ভে স্থাপন করা এসব পাইপলাইনের ব্যাস থাকছে ১৬ ইঞ্চি। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ৮ দশমিক ২৯ কিলোমিটার পাইপলাইন। স্ক্যাডা, টেলিকমিউনিকেশন ও লিক ডিটেকশন করতে এই পাইপলাইনের সঙ্গে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল লাইন সংযুক্ত রয়েছে। তবে এসব পাইপলাইনের ব্যাস ১৬ ইঞ্চির পরিবর্তে ১০ ইঞ্চি থাকছে। পতেঙ্গা থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত পাইপলাইন যাচ্ছে ২২টি নদীর তলদেশ ছুঁয়ে। পাইপলাইনজুড়ে থাকছে ৯টি স্টেশন। আর কুমিল্লার বরুড়ায় ২১ হাজার টনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন স্থাপন হচ্ছে নতুন করে একটি ডিপো।
প্রকল্প পরিচালক পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানির প্রকৌশলী মো. আমিনুল হক বলেন, আমাদের পাইপলাইন, ডিপো, রিজার্ভার সব প্রস্তুত করা হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমরা নতুন স্থাপিত পাইপলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে জ্বালানি পরিবহণ করেছি। কোনো ধরনের সিস্টেম লস ছাড়াই প্রায় পাঁচ কোটি লিটার ডিজেল আমরা পরিবহণ করেছি। পাইপলাইনে কিছু কারিগরি ত্রুটি ছিল, সেগুলো সমাধান করা হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: