মাছ মুরগি সবজির বাজারে আগুন

নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২৫ ১১:০৭ এএম

বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল। কাঁটাবনে বাস থেকে নেমে একটু উত্তর দিকে এগোলেই হাতিরপুল কাঁচাবাজার। প্রথমেই দেখা হয় ভূতেরগলির বাসিন্দা আরিফা বেগমের সঙ্গে। তিনি কয়েক রকমের সবজি কিনে বাসায় ফিরছিলেন। কেমন দামে কিনলেন জিজ্ঞেস করতেই বলেন, কয়েকদিন আগেও সবজির দাম অনেকটাই কম ছিল।

টানা বর্ষণে সবজির বাজারে আগুন ধরেছে। ভ্যানে দাম বেশি বলে বাজারে এসেও দেখি দাম চড়া। চালের দামও বেড়েছে। এতে সংসারের ব্যয় বেড়ে গেছে, কিন্তু আমাদের ইনকাম তো বাড়েনি। এভাবেই অকপটে কথাগুলো বলে বাজারের চিত্র তুলে ধরছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফা।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাতিরপুল, নয়াবাজার ও কারওয়ানবাজার ঘুরেও আরিফার কথা সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার তথ্যের মিল পাওয়া যায়।

কয়েক দিনের টানা বর্ষণের প্রভাব পড়েছে রাজধানীর বাজারে। বৃষ্টিতে ক্রেতার উপস্থিতি কমলেও সরবরাহ কমে মাছ, মুরগি, কাঁচামরিচ ও কাঁচা তরিতরকারির দাম বেড়েছে। বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকার ওপরে। আর চার সপ্তাহ আগে মিনিকেটের দাম যেভাবে বেড়েছিল, সেই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি ৫০-৬০ টাকা কমলেও খুচরাবাজারে এর কোনো প্রভাব নেই।

হাতিরপুল কাঁচাবাজারে মানসম্মত সবজি বিক্রি হয়, এখানে দামও তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি থাকে। এ বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে সবজির সরবরাহ কমে দাম বাড়তি। ফলে খুচরাবাজারে ক্রেতা কমলেও দাম চড়া।

বিক্রেতারা জানান, টানা বৃষ্টির কারণে কাঁচামরিচ, বেগুনসহ সব ধরনের তরিতরকারির দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়। তিন-চার দিন আগে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা ছিল। তবে বাজার ও এলাকা ভেদে এ দাম কমবেশি লক্ষ করা গেছে। পাড়া-মহল্লার দোকানে ও ভ্যানে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।

এ ছাড়া অধিকাংশ সবজির দামই কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বৃহস্পতিবার হাতিরপুল বাজারে প্রতি কেজি করলা, ঢ্যাঁড়শ, লাউ, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ও কচুরলতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। কয়েকদিন আগেও এসব সবজির দাম কিছুটা কম ছিল। বরবটি ও কাঁকরোলের দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকা হয়েছে। বেগুনের দাম বেড়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ৫০ টাকার কমে আছে পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া, পটলসহ কয়েকটি সবজি। আলুর দামও কিছুটা বেড়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকা হয়েছে।

তবে টমেটো, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ধনেপাতার মতো অমৌসুমি সবজির দাম আকাশচুম্বী। প্রায় সব বাজারেই প্রতি কেজি টমেটো ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা, শিম ২২০-২৫০ টাকা, ধনেপাতা ৩০০-৩৫০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

সবজির সরবরাহ কম থাকায় এর প্রভাব পড়েছে মাছ ও মুরগির বাজারে। কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে চাষের রুই আকারভেদে ৩৮০ থেকে ৪৫০, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ২৮০, পাঙাশ ২০০ থেকে ২৫০, কৈ ২৮০ থেকে ৩০০, পাবদা ও শিং ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে ব্রয়লারের কেজি এখন ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। তিন দিন আগেও সোনালি মুরগির দাম ছিল ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা, গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩১০ টাকায়। মুরগির ডিমের দামও কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০-৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা।

অবশ্য কারওয়ানবাজার বা বড় পাইকারি বাজারে প্রতিটি সবজির দামই অন্যান্য বাজারের তুলনায় কম। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় সবখানেই বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সবজির দাম কিছুটা বেড়ে যায়। পেঁয়াজ, রসুন, আদা আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী রাসেল। এর মধ্যে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০, রসুন ১২০ থেকে ২০০, আদা ১৪০ থেকে ২২০ বিক্রি হচ্ছে।

চার সপ্তাহ বাড়তি দামেই তীর, ডায়মন্ড, সাগর, মঞ্জুর, রশিদ প্রভৃতি ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল এখন ৮০ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোজাম্মেল মিনিকেটের দাম প্রতি কেজি ৮৫-৯০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি স্বর্ণা (মোটা চাল) ৫৫-৫৮ টাকা, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ (মাঝারি চাল) জাতের চাল ৬০-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মায়ের দোয়া স্টোরের ইমামুদ্দিন বাবলু বলেন, খোলা চিনির দাম কিছুটা কমে কেজিতে ১০৫ টাকা, প্যাকেট চিনি কেজিতে ৫ টাকা কমে ১১৫ টাকা হয়েছে। মোটা মসুর ডালের দাম কিছুটা কমে কেজি ৯৫ টাকা, মুগডাল কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৬০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া বেড়েছে সব ধরনের টিস্যু ও গুঁড়া দুধের দাম। দীর্ঘদিন থেকে কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রি করেন শাহানা। তিনি বলেন, তিন দিন থেকে বৃষ্টির কারণে ঠিকমতো বেচাবিক্রি করতে পারি না। এরপর আবার আড়তে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

আড়তদার বাবুল মিয়া বলেন, টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। এ জন্য মোকাম থেকে সরবরাহ অর্ধেকের কম। ফলে দাম বেড়েছে। তবে বৃষ্টি না কমলে সবজির দাম আরো বাড়তে পারে বলে জানান তারা।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর