আরও ২ দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের
আপডেট: ২৪ মে ২০২৫ ১০:০৪ পিএম

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুই ভাগ করার অধ্যাদেশে সরকার প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার ঘোষণা দিলেও তাতে খুশি নয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। প্রতিবাদে আগামী ২৫ ও ২৬ মে ফের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এই সংগঠন।
শনিবার (২৪ মে) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির তথ্য জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত কমিশনার এদিপ বিল্লাহ, উপ কর-কমিশনার মো. মোস্তফিজুর রহমান ও সহকারী কমিশনার মো. ইশতিয়াক হোসেন।
এনবিআর বিলুপ্ত করার অধ্যাদেশ বাতিল করাসহ তিন দাবিতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন এনবিআরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
আর সংস্থাটির চেয়ারম্যানের অপসারণসহ চার দফা দাবিতে গত বুধবার ২১ মে থেকে আন্দোলন শুরু করেন এনবিআরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে এনবিআরের সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
চার দফার দাবির মধ্যে রয়েছে- জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করা; অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা; রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর অর্থ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাদেশে ‘প্রয়োজনীয় সংশোধনী’ আনা হবে বলে জানায়। ওই রাতেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ জানায়, অধ্যাদেশ বাতিলসহ তাদের চার দাবির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস মেলেনি। দাবি আদায়ে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শনিবার (২৪ মে) থেকে চলবে।
সেই ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার সকাল থেকেই চার দফা দাবিতে আগারগাঁওয়ে এনবিআর কার্যালয়ে আসতে শুরু করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা নিচ তলাসহ বিভিন্ন ফ্লোরে অবস্থান নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। সকাল থেকেই পুলিশ, র্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল পরিমাণ সদস্য মোতায়েন করা হয় এনবিআর ভবনে। পরিচয়পত্র দেখিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভবনে প্রবেশ করতে হয়েছে।
এরপর বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামী ২৫ মে কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনসমূহ ব্যতীত আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। এদিন কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনসমূহে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। আর আগামী ২৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সকাল থেকেই এনবিআর ভবনের অভ্যন্তরে এবং বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি রয়েছে। বিষয়টি আমাদের মনে নানা ধরনের প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।
সংগঠনটি জানায়, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক, যা এরই মধ্যে দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ, থিংকট্যাংকসহ সর্বমহলে স্বীকৃত হয়েছে। আমরা এনবিআর তথা রাজস্ব প্রশাসনের আমূল সংস্কার চাই। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। আমাদের চাওয়া এই সংস্কার হবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত সর্বোত্তম ব্যবস্থা ও পদ্ধতির অনুরূপ। দেশের স্বার্থ ও উন্নয়ন দর্শন এতে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে; রাজস্ব প্রশাসন অধিকতর কার্যকর, প্রগতিশীল ও দুর্নীতিমুক্ত হবে এবং সংস্কার বিশেষ কারও স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আন্তর্জাতিক উত্তম মানদণ্ড অনুযায়ী আমরা চাই রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তব ও পেশাগত জ্ঞানধারী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। রাজস্ব ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের স্বার্থে আমাদের এমন যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে সরকার কেন, কী কারণে এবং কাদের প্ররোচনায় বিলম্ব করছে, তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।
এনবিআরের কর্মকর্তা তাসনিম আলম বলেন, আমরা আশা করছিলাম আজ একটা সমাধান আসবে। কিন্তু কোনো সমাধান আসেনি। উল্টো নিরাপত্তার নামে পুরো এনবিআর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: