এশিয়াটিক গ্রুপের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১১:০৪ এএম

বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক গ্রুপের আট পরিচালকসহ তাদের ১৭ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। হিসাব জব্দের পাশাপাশি ওই সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের আর্থিক লেনদেনের তথ্য চেয়ে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওাতধীন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। সিআইসি থেকে চিঠিটি বুধবার বিকালে পাঠানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে

ব্যাংক হিসাব জব্দের তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রয়াত আলী যাকেরের স্ত্রী সারা যাকের, ছেলে ইরেশ যাকের, মেয়ে শ্রেয়া সর্বজয়া, ইকরাম মাঈন চৌধুরী, মো. মোরশেদ আলম, মোহাম্মদ হাসান ফারুক ও মো. রেজাউল হাসান। এদের সবাই এশিয়াটিক গ্রুপের পরিচালক পদে রয়েছেন।

তবে এশিয়াটিক গ্রুপ দেওয়া তথ্যে দাবি করেছিল, গত বছরের আগস্ট মাসে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আসাদুজ্জামান নূর এশিয়াটিকের সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন এবং তাকে এশিয়াটিকের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে তিনি আগস্টের কোন সময়ে পদত্যাগ করেন, এ বিষয়ে এশিয়াটিকের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

বুধবার এশিয়াটিকের ওই ১৭ প্রতিষ্ঠানের সবগুলো ব্যাংক হিসাব জব্দেরও নির্দেশ দেয় সিআইসি। যেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে সেগুলো হলো এশিয়াটিক মিডিয়া লিমিটেড (পূর্ববর্তী নাম এশিয়াটিক এমইসি লিমিটেড), এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশন লিমিটেড, এশিয়াটিক টকিং পয়েন্ট কমিউনিকেশনস লিমিটেড (পূর্ববর্তী নাম টকিং পয়েন্ট কমিউনিকেশনস লিমিটেড), এশিয়াটিক এক্সপেরিয়েনশিয়াল মার্কেটিং লিমিটেড, অপটিমাম সার্ভিস লিমিটেড (পূর্বতন নাম অপটিমাম লজিস্টিক সার্ভিস লিমিটেড), এশিয়াটিক ইভেন্টস মার্কেটিং লিমিটেড, মিডিয়া কমিউনিকেশন্স লিমিটেড, এশিয়াটিক ইভেন্টস মার্কেটিং লিমিটেড, ফোরথট পিআর লিমিটেড, এশিয়াটিক মাইন্ড শেয়ার লিমিটেড, এশিয়াটিক টিএমএস লিমিটেড, ব্ল্যাকবোর্ড স্ট্র্যাটেজিজ লিমিটেড, আউট অব দ্য ব্লু-ডিজাইন স্টুডিও লিমিটেড (পূর্বতন নাম কুকি জার লিমিটেড), ধ্বনি চিত্র লিমিটেড (পূর্বতন নাম ধ্বনি রেকর্ডিং স্টুডিও লিমিটেড), স্টেনসিল বাংলাদেশ লিমিটেড, রেডিও স্বাধীন প্রাইভেট লিমিটেড ও ইস্ট এশিয়াটিক অ্যাডভারটাইজিং লিমিটেড।

ব্যাংক হিসাব জব্দে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইসির এক কর্মকর্তা বলেন, এক ব্যক্তি স্বনামে এবং তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিসহ এশিয়াটিকের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনসহকারে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে তথ্যানুসন্ধানের বিষয়ে সিআইসি সূত্র জানায়, উল্লিখিত ব্যক্তি ও তাদের মালিকানাধীন ব্যাংক, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সম্পদে বিনিয়োগের সঠিক তথ্য গোপনপূর্বক করদাতা প্রযোজ্য কর যথাযথভাবে পরিশোধ না করে আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন, যা পুনরুদ্ধারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন করা হয়ে গেলে রাজস্ব আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।

এমতবাস্থায় রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করার জন্য উল্লিখিত করদাতা ও তাদের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো পরিচালিত সব ব্যাংক হিসাবের অর্থ উত্তোলন অথবা স্থানান্তর স্থগিতের জন্য আয়কর আইন ২০২৩-এর ২২৩(২) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রধানের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এদিকে এশিয়াটিকের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থের অবৈধ ব্যবহার ও আত্মসাতের অভিযোগে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিআইসি মহাপরিচালকের দপ্তরে একটি আবেদন জমা পড়ে। ওই আবেদনে বলা হয়, ২০০৯ ও ২০১৪ সালের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এশিয়াটিক গ্রুপের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারকে দেওয়ার নামে প্রচুর স্বর্ণ এবং অর্থ আত্মসাৎ করে। ২০২০ ও ২০২১ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর আগমন, মুজিব শতবর্ষ পালন, জয়বাংলা কনসার্টসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ করে।

এসব প্রতিষ্ঠান মিডিয়ায় বাজেট নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন ইভেন্ট তৈরির নামে সরকারি হাজার কোটি টাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। ২০২৩ সালে সরকারি অর্থে মুজিব সিনেমা প্রচার অথবা প্রকাশের ক্ষেত্রে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মূলত ওই ব্যক্তিরা বিগত সরকারের আমলে অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদনে বলা হয়।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর