ডাকাতী'র মামলা খেয়েও, এলাকায় আধিপত্য ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রন

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:১১ পিএম

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার রাজু খান এখন সাধারণ মানুষের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। তার ছত্রছায়ায় এলাকায় মাদক ব্যবসা, চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও নানা অপরাধ প্রতিনিয়তই ঘটছে। নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী ব্যবহার করে তিনি এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

 অভিযোগ রয়েছে, পতিত আওয়ামী সরকারের সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি এই সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেন। কিন্তু ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়েও বহাল তবিয়তে কর্মকান্ড পরিচালনা করছে এই বাহিনী।

৫ই আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর টাকার বিনিময়ে রাজু খান উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ লাভ করেন। এই নতুন পরিচয় তাকে আরও বেপরোয়া করে তোলে। তার প্রভাবের কারণে বর্তমানে উপজেলার বিভিন্নস্থানে মাদকের বিস্তার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

অভিযোগ রয়েছে, ২০২৩ সালে আওয়ামী শাসনামলে রাজু খান, তার ভাই রিয়াদ খান ও তাদের সহযোগীরা আমবাড়ি এলাকার এক ধর্নাঢ্য বাড়িতে ভয়াবহ ডাকাতি চালায়। এসময় বাড়ি থেকে ৪৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও প্রায় ৫ লাখ টাকা লুটের অভিযোগে, ভুক্তভোগীরা বাদী হয়ে মামলা করেন। সেই মামলা দায়েরের পর থেকেই বাদী পরিবারের ওপর শুরু হয় হুমকি–ধামকি, ভয়ভীতি ও চাপ। নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে রাজু খান মামলার তদন্তের গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টা করেন এবং স্থানীয় পর্যায়ে তদন্ত প্রতিবেদনে প্রভাব খাটান।

সর্বস্বহারা বাদী আদালতে নারাজি আবেদন করলে মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিবি তদন্তে রাজু খান ও রিয়াদ খানের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় সংস্থাটি। এ সময়ের মধ্যে ঘটে রাজনৈতিক পালাবদল। নতুন ক্ষমতার ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদকের পরিচয় ব্যবহার করে উল্টো বাদী হান্নান তালুকদারের নামে দুইটি মিথ্যা মামলা দেয় রাজু খান।

ডাকাতি মামলার বাদী হান্নান তালুকদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “আমি একজন সাধারণ মানুষ। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু আমাকে আওয়ামী লীগার সাজিয়ে দুইটি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। রাজু খান হুমকি দিয়েছে, বিএনপি যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন আমাকে সব মামলায় জড়ানো হবে। তবে ডাকাতি মামলা উঠিয়ে নিলে আর মামলা দেবে না বলেও জানানো হয়েছে।”

তার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল হাসান অপুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “হান্নান তালুকদারকে আমি দীর্ঘদিন ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি কোনো রাজনীতি করেন না। ডাকাতি মামলার বাদী হওয়ায় হয়তো তাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার আড়ালে রাজু খান দীর্ঘদিন ধরে একটি অপরাধী চক্র পরিচালনা করছে। বাদী পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং এলাকার মানুষ আশঙ্কা করছেন—এই চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে চিতলমারীতে অপরাধ আরও বাড়বে।

LIMON

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর