চট্টগ্রামে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে টার্গেট কিলিং, নেপথ্যে...
চট্টগ্রামে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে টার্গেট কিলিং। কেউ ভারতে বসে গ্রুপ পরিচালনা করছে, কেউ কারাগার থেকেই দিচ্ছে খুনের নির্দেশ। আবার কেউ প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহর ও জেলায়। এমন বেপরোয়া অন্তত আট শীর্ষ সন্ত্রাসীর গ্রুপ একের পর এক 'টার্গেট কিলিং' ঘটালেও, তাদের বাগে আনতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উদ্ধারও হচ্ছে না অস্ত্রও।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে চট্টগ্রামে শুরু হয় নতুন করে টার্গেট কিলিংয়ের ধারাবাহিকতা। প্রথমে খুন হন মাসুদ ও আনিস। ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট কুয়াইশ এলাকায় গুলি করে তাদের হত্যা করা হয়। এরপর একে একে নিহত হন চাঁন্দগাঁওয়ের ব্যবসায়ী তাহসীন, বাকলিয়া এক্সেস রোডে প্রাইভেটকারে থাকা দুই ব্যক্তি, পতেঙ্গার ঢাকাইয়া আকবর, আর সর্বশেষ গত বুধবার বায়েজিদ এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় সারোয়ার বাবলাকে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, পুরো চট্টগ্রামে এসব খুনের পেছনে আছে ছয় শীর্ষ সন্ত্রাসীর গ্রুপ। এরমধ্যে ২০০৪ সালে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাজ্জাদ আলী অন্যতম। সেখানে বসেই চট্টগ্রামে অপরাধজগত নিয়ন্ত্রণ করে ১২ মামলার আসামি সাজ্জাদ। এছাড়া কারাগারে বসেই বাহিনী চালাচ্ছে ছোট সাজ্জাদ।
এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর হয়ে শহর থেকে জেলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী রায়হান। সাম্প্রতিক সব হত্যাকাণ্ডেই তার সরাসরি উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া মোবারক হোসেন ইমন, শহীদুল ইসলাম বুইস্যা, ইসমাইল হোসেন টেম্পু, খোরশেদ ও বোরহানও সক্রিয় অপরাধ জগতে।
র্যাব ৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান বলেন, সব অপরাধীদের ধরতেই আমাদের প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।
চট্টগ্রামে জেলায় টার্গেট কিলিংয়ের সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটছে রাউজানে। যেখানে হুমকি দিয়ে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয় অন্তত ৭ জনকে। এসব হত্যার সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাও।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, আমাদের মোটো একটাই, হয় পুলিশ থাকবে না হয় সন্ত্রাসী থাকবে। দুই দল থাকতে পারবে না। এই চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা আমাদের মূল লক্ষ্য। এখানে বসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার সুযোগ নেই। এখনও সময় আছে তারা আত্মসমর্পণ না করলে পরবর্তীতে তাদের কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
সাজ্জাদ আলী ছাড়া প্রায় সবাই জামিনে মুক্ত হয় পাঁচ আগস্টের পর। সবমিলেয়ে ৩০ জনের বেশি সন্ত্রাসী সে সময়ে মুক্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সংস্থা। যারা অস্থিরতা বাড়িয়েছে অপরাধ জগতে।
সনাক-টিইবির সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, তারা সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে হত্যা করছে। কোথায় চলে গিয়েছি আমরা। প্রশাসন হোক আর রাজনৈতিক দলের আস্কারায় হোক ক্ষমতাবানদের প্রশ্রয়-আশ্রয় পাচ্ছে বলেই তারা এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
গত ১৫ মাসে চট্টগ্রাম নগর ও জেলা মিলে খুন হয়েছে ৩৫ জন। এরমধ্যে প্রাণ গেছে ২২ জনের গুলিতে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: