ঘুষ ছাড়া কলম নড়ে না ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার হয়রানি-ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, নিজস্ব দালাল চক্রের মাধ্যমে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত:
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:০৯ পিএম

পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চলছে ঘুষের মহোৎসব। ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা কাজী মো. জাহিদুল ইসলাম সরকারি ফি’র চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিজস্ব দালাল চক্রের মাধ্যমে অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর, হোল্ডিং অনুমোদন, মিউটেশন, সরকারি খাল ও পুকুর খাস আদায় নামে প্রতারণা এবং এমপি ১৪৪-১৪৫ মামলার প্রতিবেদন গ্রহণে ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল অগ্রসর হয় না।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, কর্মকর্তা অফিসে রাতেই বেশি ঘুষের লেনদেন করেন। সরকারি খাস জমি দখলের অভিযোগ তুলে মৎস্য চাষীদের কাছ থেকেও তিনি মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করায় চলতি বছরের জুলাই মাসে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা। অভিযোগ উঠেছে, যোগদানের পরপরই কাজী মো. জাহিদুল ইসলাম ঘুষের টাকা গন্ধে ক্ষুধার্ত শকুনের মতো আচরণ শুরু করেছেন। তার পরিচালিত দালাল চক্রের মাধ্যমে আসা ফাইল ছাড়া কোনো কাজ তিনি করেন না।
এ বিষয়ে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে দেখা যায়, তার কক্ষে লোকজনের ভিড় লেগে আছে। এসময় দালালদের উপস্থিতি ও ঘুষ লেনদেনের ভিডিও ধারণ করলে নয়া দিগন্তের সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন ওই কর্মকর্তা। এক পর্যায়ে সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন এবং অফিসে মব পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেন।
জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে কামরুল ইসলাম হিরু বলেন, তহশিলদার ঘের মালিকদের কাছে নোটিশ দেয়। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন আমাদের দখলে থাকা খাস জমি উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য। আসলে আমাদের দখলে কোন খাস জমি নেই। টাকার জন্য আমাদেরকে ইউএনও রাজীব দাশ পুরকায়স্থ ও ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম ৫ লাখ টাকা জন্য নানা রকমের চাপ প্রয়োগ করে। একপর্যায়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে মাছের ঘের কেটে দেয়। অভিযান শেষে যাওয়ার সময়ে ঘেরের কর্মচারীদেরকে ইউএনও বলেন, একদিনে মধ্যে তার সাথে দেখা করতে নয়তো চরম ক্ষতি হবে।
সদর ইউনিয়নের পূর্ব বাহেরচর গ্রামের মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ৩৬ শতাংশ জমির মিউটেশনের জন্য জাহিদ তহশিলদারের কাছে গেলে আমাকে ৮ হাজার টাকা দিতে বলে। অথচ সরকারি ফি ১ হাজার ১৮০ টাকা। সরকারি ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমার মুখের উপরে দলিল ছুঁড়ে মারেন এবং বলেন দলিলে ত্রæটি আছে, আমি আপনার দলিল বাতিল করবো। মূলত দালাল ছাড়া গেছি বলেই আমার কাজ হয়নি। সে আমাকে হয়রানি করেছে।
আমলিবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর হাই মুন্সী বলেন, সরকারি খাস খাল ইজারা দেয়ার কথা বলে আমাদের থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে একটা ভূয়া কাগজ ধরিয়ে দেয়। সেই কাগজ নিয়ে খাস খালে কাছে গিয়ে এলাকাবাসীর কাছে অপমান-অপদস্থ হয়েছি। পরে টাকা না দিয়ে বলে আগামী বছরে ইজারার ব্যবস্থা করে দিমু।
ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালী গ্রামের মিজানুর বলেন, জাহিদ তহশিলদার তার দালাল মানিক মোল্লার মাধ্যমে একর প্রতি ৫ হাজার নেয়। জমির কেস নম্বর বাদ দিয়ে সরকারি খাস খতিয়ানে গেছে বলে ২০ হাজার করে টাকা দাবী করেন তিনি। এই এলাকার মানুষ তহশিলদার অত্যাচারে অতিষ্ঠ।
কাউখালী গ্রামের চাঁন বাজারের নুরজামাল মৃধা বলেন, রেকর্ডী সম্পত্তিতে মাছের ঘের করেছি। সেখানে এসে তহশিলদার বলেন খাস জমিতে ঘের রয়েছে বলে একটি নোটিশ দিয়ে আমাদের তার অফিসে ডাকেন। পওে মোটা অঙ্কের টাকা দাবী করেন। টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করায় ইউএনও’র মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট করে ঘের কেটে দেয়। তার দালাল হচ্ছে মানিক মোল্লার। ওর মাধ্যমে টাকাপয়সা তোলেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা কাজী মো. জাহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজীব দাশ পুরকায়স্থ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।
LIMON
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: