গোপালগঞ্জে আত্মগোপনে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা, চলছে ব্যাপক তল্লাশি
আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৫ ১:১৪ পিএম

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ও সমাবেশে আওয়ামী ক্যাডারদের হামলার পর থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুরো জেলায়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করছেন যৌথবাহিনীর সদস্যরা। ইতোমধ্যে ধরা হয়েছে অন্তত ২৪ জনকে। তবে হামলার পর প্রায় সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তাদের দেখা মিলছে না কোথাও। সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গতকাল বৃহস্পতিবার বাড়া
বুধবার দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। হামলাকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়। অন্তত ৯ জন গুলিবিদ্ধসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। পরে কারফিউ জারি করা হয়। তা বলবৎ ছিল গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। সেই সময়সীমা আজ শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত বাড়িয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে জানানো হয়, কারফিউ শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য স্থগিত থাকবে। দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চলবে।
প্রত্যক্ষদর্শী, গণমাধ্যমকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানান, এনসিপির কর্মসূচিতে হামলা করতে আগে থেকে লোক জড়ো করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। তাদের হাজারো নেতাকর্মী ও সমর্থককে উপজেলা ও গ্রাম থেকে শহরে আনা হয়েছিল। ছোট ছোট দলে তারা অবস্থান নিয়েছিল বিভিন্ন অলিগলি ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে।
গতকাল দুপুরে জেলা শহরের লঞ্চঘাট ব্রিজের গোড়ায় বসে কথা হয় প্রত্যক্ষদর্শী এক তরুণের সঙ্গে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘এখন তো সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রশাসনকে তো সবাই ভয় পায়। তাই কেউ প্রকাশ্যে আসছে না, পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’
গ্রামপুলিশের স্থানীয় এক সদস্য বলেন, সকালে পুলিশের গাড়িতে হামলা ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আগে থেকেই এনসিপি নেতাকর্মীদের আটকে রাখা ও মারধরের পরিকল্পনা ছিল। সেভাবে গ্রাম থেকে প্রচুর মানুষ এসেছিল। তারা ছোট ছোট ভাগে শহরের অলিগলিতে ছিল। আর আধা ঘণ্টা সময় গেলে হয়তো কোনোভাবেই তাদের (এনসিপির নেতাকর্মী) অক্ষত রাখা সম্ভব হতো না।
কারফিউ জারি থাকায় গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরে বিপুলসংখ্যক সেনা, বিজিবি, পুলিশ ও এপিবিএন সদস্য সড়কে টহল দিতে শুরু করেন। দুপুর ১টার সময় শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সেনাবাহিনী সাঁজোয়া যান নিয়ে বের হয়। সেনাসদস্যরা কারফিউ বাস্তবায়নের জন্য মাইকিং করে স্থানীয়দের রাস্তাঘাট-অলিগলিতে না থাকার জন্য বলেন। সবাইকে নিজ নিজ ঘরে থাকতে বলা হয়।
গোপালগঞ্জ শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থকদের কোনো মিছিল-মিটিং হয়নি। গ্রেপ্তার আতঙ্কে তারা গা-ঢাকা দিয়েছে। বন্ধ আছে সব ধরনের দোকানপাট ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। হয়নি কোনো লেনদেন। তবে রিকশা, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। মাঝেমধ্যে দু-একজন করে লোককে রাস্তায় বের হতেও দেখা যায়। তবে রাতে গোপালগঞ্জ শহর ছিল ভূতুড়ে নগরী।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বলেন, আটকদের সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে মামলা দায়ের হয়নি।
আওয়ামী ক্যাডারদের দফায় দফায় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কারাগার পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল তানভীর। তিনি গতকাল বেলা সোয়া ১১টায় সেখানে পৌঁছান। এ সময় কারা কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা ও গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। কর্নেল তানভীর বলেন, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কারাগারে হামলা ঠেকানো গেছে। নতুন করে হামলার আশঙ্কা না থাকলেও সেনাবাহিনী, বিজিবি ও কারারক্ষীরা সতর্ক অবস্থানে আছেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: