এসএসসি ও দাখিলের

প্রথম দিনেই অনুপস্থিত ২৭ হাজার, বহিষ্কার ২২ পরীক্ষার্থী

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২৫ ২১:০৪ পিএম

চলতি বছরের এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষা বৃহস্পতিবার সারা দেশে একযোগে শুরু হয়েছে। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে পরীক্ষার প্রথম দিনেই সারা দেশে অনুপস্থিত ছিলেন ২৬ হাজার ৯২৮ জন পরীক্ষার্থী। আর অসদুপায় অবলম্বনের অপরাধে বহিষ্কার হয়েছেন ২২ জন পরীক্ষার্থী। এবার অনুপস্থিতির হার ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। মাদ্রাসা বোর্ডে সবচেয়ে বেশি ৩.৬৭ শতাংশ শিক্ষার

গত বছর প্রথম দিনে সারা দেশে অনুপস্থিত ছিলেন ১৯ হাজার ৩৫৯ জন পরীক্ষার্থী। সে তুলনায় এবার অনুপস্থিতি বেড়েছে। প্রথম দিনের পরীক্ষা শেষে আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে প্রথম দিনের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার।

তিনি এদিন মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় এবং মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাস পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শনকালে উপদেষ্টা বলেন, এবারের এসএসসি পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হয়েছে, পরীক্ষার পরিবেশ ভালো। এবারের পরীক্ষায় ৩৭১৫টি কেন্দ্রে ৩০০৪৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯২৮১৮১ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে।

উপদেষ্টা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিক্ষা নিয়ে নানাভাবে গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন গুজব পরিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মানসিকভাবে চাপে ফেলে দেয়।

তিনি বলেন, সরকার সচেতনভাবে কাজ করায় এবার এখনো প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেনি। সামনের দিনগুলোতেও এবিষয়ে সাংবাদিক, অভিভাবকসহ সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া সাধারণ নিয়মানুযায়ী দুই মাসের মধ্যেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা।

সূত্রমতে, বৃহস্পতিবার নয়টি সাধারণ ধারার শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬৩০ জন। ২ হাজার ২৮২টি কেন্দ্রে বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

আন্ত: শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৩ লাখ ১৯ হাজার ৮৯২ জন পরীক্ষার্থী বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় অংশ নেন। অনুপস্থিত ছিলেন ১৪ হাজার ৭৩৮ জন পরীক্ষার্থী।

এদিন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ২ জন, কুমিল্লা বোর্ডের ১ জন, যশোর বোর্ডের ১ জন, সিলেট বোর্ডের ১ জন, বরিশাল বোর্ডের ২ জন ও ময়মনসিংহ বোর্ডের ৩ জন পরীক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়েছেন। আর মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ১০ জন ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ২ জন বহিষ্কার করা হয়েছে।

বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের ৩ হাজার ৪৯৬ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১ হাজার ১৭৩, রাজশাহী বোর্ডে ১ হাজার ৬২২, বরিশাল বোর্ডে ১ হাজার ৩৩, সিলেট বোর্ডের ৮৭৮, দিনাজপুর বোর্ডে ১ হাজার ৩৪১, কুমিল্লা বোর্ডের ২ হাজার ৫৫৩, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৮৪২ ও যশোর বোর্ডে ১ হাজার ৮০০ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন।

এদিকে প্রথম দিনে দাখিলের কুরআন মাজিদ ও তাজবিদ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করায় ১০ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন ৯ হাজার ৬২৩ জন।

আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সারা দেশের ৭২৫টি কেন্দ্রে কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২ জন পরীক্ষার্থীর এ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিলো। তবে অংশ নেন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৮৯ জন।

এদিকে প্রথম দিনে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সারা দেশের ৬৯৯টি কেন্দ্রে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালের বাংলা-২ বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করায় ২ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদিন ১৩ লাখ ১ হাজার ২৩৬ জন পরীক্ষার্থীর এ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিলো। তবে অংশ নেন ১২ লাখ ৮ হাজার ৬৬৯ জন। অনুপস্থিত ছিলেন ২ হাজার ৫৬৭ জন।

জানা গেছে, ২০ মিনিট দেরিতে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের হাতে দেয়ার অভিযোগ ওঠে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। এ ঘটনায় পরীক্ষা শেষে তোপের মুখে পড়েন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষক।

এছাড়া চট্টগ্রামে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েও শ্রুতি লেখক জটিলতায় কেন্দ্রে বসে সময় পার করেন সাত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম নগরীর বাংলাদেশ মহিলা সমিতি (বাওয়া) উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা সবাই নগরীর হামজারবাগ এলাকার রহমানীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ম না মেনে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা নিজেদের মত করে শ্রুতি লেখক ঠিক করেছেন; যারা কারণে শ্রুতি লেখকদের কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

রাজধানীর বেশিরভাগ কেন্দ্রের পরীক্ষার পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।

তবে ফেনীতে দাখিল পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীকে হাতে লিখে প্রশ্নোত্তর সরবরাহের দায়ে মো. ইউনুস নামে এক শিক্ষককে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ফেনী আলিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা নাসরিন কান্তা এ দণ্ডাদেশ দেন। সাজাপ্রাপ্ত মো. ইউনুস ফেনী সদর উপজেলার মটুয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর