আইন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে বিএনপিকে সুবিধা দেয়ার আশ্বাসের অভিযোগ এনসিপির

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:১১ পিএম

আইন উপদেষ্টা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন না করতে বিএনপিকে আশ্বাস দিয়েছে, এমন অভিযোগ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে রোববার (২ নভেম্বর) আসিফ নজরুলকে চিঠিও পাঠিয়েছে দলটি।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন সংক্রান্ত আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিকে আপনার ব্যক্তিগত আশ্বাস ও অবস্থান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, একজন উপদেষ্টা হিসেবে আপনি রাষ্ট্রের নিরপেক্ষ আইন উপদেষ্টা, কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন। নির্বাচনী আইন সংশোধনের মতো বিষয়ে কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে এককভাবে আশ্বাস প্রদান করা জুলাই গণঅভুথান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদের নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতার পরিপন্থি।

আইন সংশোধনের মতো সিদ্ধান্ত কোনও একক ব্যক্তির নয় বলে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক, পরামর্শনির্ভর ও জনস্বার্থমূলক প্রক্রিয়া। অতএব, সরকারের পক্ষে এমন কোনো আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতি দেয়া, যা একটি নির্দিষ্ট দলের দাবির সঙ্গে একমত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়, তা আপনার প্রশাসনের প্রতি জন-আস্থাকে দুর্বল করবে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতার ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। একইসঙ্গে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে আপনি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের বিপরীতে যে অবস্থান নিয়েছেন তা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপন্থী বলে আমরা মনে করি।

চিঠিতে বলা হয়, প্রথমত, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ব্যবস্থার উদ্দেশ্যই হলো দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, আর্থিক স্বচ্ছতা ও নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। কিন্তু যখন নিবন্ধিত দল অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করে, তখন তারা নিজেদের নিবন্ধনের দায়বদ্ধতা থেকে কার্যত অব্যাহতি পায়। এতে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার নিজস্ব অর্থই হারিয়ে যায়। একদিকে দলটি আলাদা পরিচয় দাবি করে, অন্যদিকে নির্বাচনে অন্য দলের প্রতীক ব্যবহার করে। এটি আইনি বৈপরীত্য সৃষ্টি করে এবং নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতাকে অকার্যকর করে তোলে। দ্বিতীয়ত, গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি হলো রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা। যে দলের নামে জনগণ ভোট দেন, সেই দলই নির্বাচনের পর জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। কিন্তু যখন একাধিক নিবন্ধিত দল বড় দলের প্রতীকে নির্বাচন করে, তখন ভোটার জানেন না তিনি আসলে কাকে ভোট দিচ্ছেন। ভোটার যে রাজনৈতিক দর্শন, নীতি বা নেতৃত্বকে সমর্থন জানাতে চান, তা অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। এর ফলে ভোটার-দায়বদ্ধতার সম্পর্ক ভেঙে যায়। তৃতীয়ত, এই বিধান কৃত্রিম বহুদলীয়তা সৃষ্টি করে এবং বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে কাঠামোগত সুবিধা দেয়। বড় দলগুলো নিজস্ব স্বার্থে ছোট ছোট “প্রক্সি দল” তৈরি করে তাদের প্রতীকে নির্বাচন করায়। পরে এই ছোট দলগুলো সংসদে বা বিভিন্ন কমিটিতে কৃত্রিম ভিন্নমত নিয়ে হাজির হয়ে বাস্তবে সেই বড় দলেরই বক্তব্য পুনরাবৃত্তি করে। এতে গণপরিসরে মতের বৈচিত্র্য নষ্ট হয়, “জাতীয় ঐকমত্য” গঠনের প্রক্রিয়া বিকৃত হয় এবং নির্বাচনের পরবর্তী নীতিনির্ধারণে আর্টিফিশিয়াল বহুমতের জন্ম হয়।’

এর আগে, গত ২৫ অক্টোবর বিএনপির পক্ষ থেকে আসিফ নজরুলকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের মতামত আহ্বানের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি যথাসময়ে মতামত প্রদান করেছে। গনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর বিভিন্ন অনুচ্ছেদের সংশোধনীর বিষয়ে আমাদের দল একমত প্রকাশ করলেও গনপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ২০ অনুচ্ছেদে রাজনৈতিক দল বা জোটের অনুকূলে প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে কোনো সংশোধনী আনয়ন না করার জন্য পূর্বেই আমাদের মতামত জানিয়েছি।’

বিএনপির পাঠানো ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছিল, ‘এ প্রসঙ্গে ইতোপূর্বে আপনার সাথে আমাদের আলোচনার বিষয়টি অনুগ্রহ করে স্মরণ করা যেতে পারে। আপনি আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ২০নং অনুচ্ছেদে কোনো রূপ সংশোধনী আনা হবে না, অর্থাৎ পূর্বের বিধান বহাল থাকবে। কিন্তু ২৪ অক্টোবর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে “জোট করলেও ভোট করতে হবে দলীয় প্রতীকে” এ জাতীয় শিরোনামে সংবাদ প্রচারিত ও প্রকাশিত হলে আমরা হতবাক হয়েছি। বিশেষ করে, সরকারের সম্মানিত আইন উপদেষ্টা হিসেবে আপনি আমাদেরকে আশ্বস্ত করার পরও ২০ অনুচ্ছেদের এই সংশোধনী খুবই দুঃখজনক। উল্লেখযোগ্য যে, আপনি আশ্বস্ত করার কারণে এ বিষয়টি নিয়ে আমরা পত্র-পত্রিকায় কিংবা গণমাধ্যমের সাথে আলোচনা থেকে বিরত থেকেছিলাম।’

LIMON

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর