দু একটি রাজনৈতিক দলের কারণে ঐকমত্য কমিশনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়নি
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশমালার উপর প্রতিক্রিয়া ও অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করে আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজনসহ গণদাবিসমূহ আদায়ের লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে থাকা আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলসমূহ।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত যৌথ সম্মেলনে দলসমূহের নেতারা বলেন, দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আজ আমরা আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। বর্তমানে বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও স্বৈরাচার ফিরে আসার সকল পথ রুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়। অনেকগুলো প্রস্তাবের সাথে দু/একটি রাজনৈতিক দল ভিন্নমত পোষণ করায় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
ইতোমধ্যেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রধান উপদেষ্টার নিকট জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা জমা দিয়েছেন। বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে সরকারকে তিনভাগে সুপারিশ করেছে ঐকমত্য কমিশন। এই সুপারিশের মধ্যে যে সকল বিষয় সংবিধান সংশ্লিষ্ট নয়- তা সরকার অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে করতে পারে। সংবিধান সংশ্লিষ্ট ৪৮টি বিষয় ও জুলাই জাতীয় সনদ সংক্রান্ত সরকার একটি আদেশ জারির পর জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়ার জন্য গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোট ব্যতীত জুলাই জাতীয় সনদ আইনগত টেকসই ভিত্তি পাবে না। গণভোটের বিষয়ে সকলেই একমত হয়েছেন। আমরা মনে করি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে নভেম্বর মাসের মধ্যে গণভোট সম্পন্ন করতে হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়ে আসছি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, কোয়ালিটি-সম্পন্ন পার্লামেন্ট এবং দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ প্রতিটি ভোট মূল্যায়নের লক্ষ্যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সাথে একমত পোষণ করেছেন।
নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। ইতোমধ্যে উপদেষ্টা পরিষদ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনীর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা লক্ষ্য করছি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের কিছু বিষয় পরিবর্তনের জন্য একটি রাজনৈতিক দল দাবি জানিয়েছে। এ দাবি কোনো অবস্থাতেই গ্রহণ করার সুযোগ নেই।
দাবিসমূহ-
আমরা আন্দোলনরত দলসমূহ জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন, আগামী নভেম্বরে গণভোট অনুষ্ঠান ও ফেব্রুয়ারি ২০২৬ এ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ৫-দফা দাবির ভিত্তিতে আন্দোলন করে আসছি। আন্দোলনকে আরও বেগবান করার জন্য আমরা নিম্নোক্ত কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
কর্মসূচি:-
১। আগামীকাল ৩০ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের নিকট স্মারকলিপি প্রদান
২। আগামী ৩ নভেম্বর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বৈঠক এবং বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আমরা দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে যারা উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আবদুল কাদের। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ। বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী। জাগপার প্রধান সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র, ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির মহাসচিব নিজামুল হক নাঈম।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: